ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক উপযোগিতা না থাকায় নতুন ইউনিট নির্মাণ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ

কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রে ইউনিট নির্মাণে চীনা কোম্পানির দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ মার্চ ২০১৬

কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রে ইউনিট নির্মাণে চীনা কোম্পানির দৌড়ঝাঁপ

রশিদ মামুন ॥ অর্থনৈতিক উপযোগিতা না থাকলেও কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রে নতুন ইউনিট নির্মাণে দৌড়ঝাঁপ করছে একটি চীনা কোম্পানি। কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রের দুটি নতুন ইউনিট নির্মাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড। বিদ্যুত বিভাগে করা এক আবেদনে কোম্পানিটি বলছে কাপ্তাইয়ে ৬ এবং ৭ নম্বর ইউনিট নির্মাণে আগ্রহী তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে পানির প্রবাহ না থাকায় নতুন ইউনিট নির্মাণ বিদ্যুত কেন্দ্রটির উৎপাদন খরচই বৃদ্ধি করবে। যা দেশের সামগ্রিক বিদ্যুত উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলবে। জানা গেছে পাওয়ার চায়নার প্রাথমিক প্রস্তাবটি গ্রহণ করে দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পাওয়ার চায়না তাদের চিঠিতে বলছে কোম্পানির ৭০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানির নিজস্ব বিনিয়োগ সক্ষমতা রয়েছে। তাদের ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি জলবিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫৪ মেগাওয়াট। কোম্পানিটির নিজস্ব নক্সা প্রণয়ন, বিনিয়োগ, কেন্দ্র নির্মাণ এবং সংরক্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে। কোম্পানিটি ১১০ দেশে বিনিয়োগ করেছে। গত বছর কোম্পানিটি ২৪ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে। তারা নিজেরাই বিদ্যুত কেন্দ্রের যন্ত্রাংশও তৈরি করে। দেশের একমাত্র জলবিদ্যুত কেন্দ্র কাপ্তাইয়ের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪২ মেগাওয়াট। এখানে পাঁচটি ইউনিট রয়েছে। প্রথম দুটির উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬ মেগাওয়াট করে। বাকি তিনটার উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট করে। কিন্তু বর্ষার ঠিক আগের দুই-তিন মাস পানির সঙ্কটে বিদ্যুত কেন্দ্রর সব ইউনিট চালানো সম্ভব হয় না। এমন বাস্তবতায় সেখানে নতুন ইউনিট নির্মাণের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। গত ১০ বছরের পানির প্রবাহ বলছে কেবলমাত্র ২০০৭ এবং ২০১৫তে ক’দিন রিজার্ভারের ওপর দিয়ে পানি উপচে পড়েছে। অন্য কোন বছরেই পানি ১০৯ ফুট অতিক্রম করেনি। চলতি মৌসুমে কাপ্তাইয়ের পানির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুটে পৌঁছায়। কিন্তু এর আগের বছর ছিল মাত্র ৮৯ ফুট। বুধবার রিজার্ভারের পানির উচ্চতা ছিল ৮৯ ফুট। অর্থাৎ বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত ১৯ ফুটের বাকি পানি দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করতে হবে। অর্থাৎ মৌসুমের শেষ দিকে গিয়ে কেন্দ্রের কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হবে। অন্তত একটি ইউনিট না চালালে কাপ্তাই এলাকায় ভোল্টেজ সমস্যা হয়। সঙ্গতকারণে বছরজুড়ে অন্তত একটি ইউনিট চালানো হয়। বুধবার বিদ্যুত কেন্দ্রটির চারটি ইউনিট চলছিল। যা দিয়ে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছিল। কাপ্তাই হ্রদের ৭০ ফুট থেকে ওপরের ১০৯ ফুট পানি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদন করে জলবিদ্যুত কেন্দ্রটি। ফলে ড্রেজিং করে নিচের দিকে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করলে তা বিদ্যুত উৎপাদনে কোন প্রভাব ফেলবে না। গত বছর বিদ্যুত কেন্দ্রটির ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ২৭ পয়সা। ওই বিবেচনায় সব থেকে কম দামের বিদ্যুত উৎপাদনে আগ্রহ থাকে সব দেশের। তবে পানির প্রবাহ না বাড়াতে পারলে কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দ্রে তা সম্ভব নয়। কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, হ্রদের পানির উচ্চতা দিয়ে হিসেব করা হয় কতটি ইউনিট চালালে বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত ৭০ ফুট পানি পাওয়া যাবে। পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, হ্রদে যে পরিমাণ পানি থাকে তা দিয়ে সারা বছর ধরে পাঁচটি ইউনিটই চালানো সম্ভব হয় না। এর ওপর দুটি নতুন ইউনিট নির্মাণ করলে বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য পৃথক বিনিয়োগ করতে হবে। আর সারা বছর কেন্দ্রগুলো বসে থাকলেও তা সংরক্ষণ এবং পরিচালনায় ব্যয় হবে। এতে এখন যে ২৭ পয়সায় বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে তা আর পাওয়া যাবে না। ফলে দেশের সামগ্রিক বিদ্যুতের দামের ওপর তা প্রভাব ফেলবে।
×