ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৮ মার্চ ২০১৬

মিয়ানমারে গণতন্ত্রের যাত্রা

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের নিগড়ে আবদ্ধ থাকার পর প্রথমবারের মতো নির্বাচিত বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হলেন থিন কিয়াও। অবশ্য থিন কিয়াওর এই বিজয় মোটেও সহজসাধ্য ছিল না; কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের নেত্রী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও জোর করে সেই জনরায় ছিনিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। এরপরও অবশ্য এনএলডির আন্দোলন-সংগ্রাম থেমে থাকেনি। হত্যা-নির্যাতন-গুম খুনও কিছু কম হয়নি সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায়। পরে গত বছরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে সুচির দল আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে। এ সময় অবশ্য সেনাসমর্থিত প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সরকার গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করায় সুচিরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। তবে এক্ষেত্রে বাদ সাধে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধান। বর্তমান সংবিধানের একটি ধারা অনুযায়ী কোন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান বিদেশী নাগরিক হলে ওই নাগরিক প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। মূলত সুচিকে কেন্দ্র করেই সংবিধানের এই সংশোধনী। কেননা সুচির প্রয়াত স্বামী ও দু’সন্তান ব্রিটিশ নাগরিক। সমস্যা আছে অন্যত্রও। সুচির দল ক্ষমতায় এলেও মিয়ানমারের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ও অবস্থান খর্ব হবে না। পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন তাদের জন্য বরাদ্দ। ফলে সুচি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করলেও সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে তারা অনড় অবস্থান নেয়। অতঃপর সুচির সমর্থনে এবং এনএলডির সদস্যদের ভোটে থিন কিয়াওর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ সুগম হয়। তিনি তার স্কুল জীবনের বন্ধু এবং সুচির ছায়া প্রেসিডেন্ট হিসেবেই বিবেচিত হবেন। নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই থিন কিয়াও বলেন, ‘এ বিজয় বোন সুচি’র। ৬৯ বছর বয়সী থিন কিয়াও মিয়ানমারের খ্যাতনামা লেখক ও কবি মিন থু উনের পুত্র এবং সুচির মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান দো খেন চির পরিচালনা করেন। এ থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, সুচির প্রতি তার আনুগত্য প্রশ্নাতীত। গণতন্ত্রের পথে মিয়ানমারের অভিযাত্রা শুরু হলেও সুচির দল এনএলডি ও প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াওর জন্য আগামী দিনের পথচলা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন দলমত ও জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য এবং সমন্বয়ের পথে অগ্রসর হতে হবে তাদের। দীর্ঘদিনের গৃহবিবাদ, দারিদ্র্য, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, ভগ্নদশাপ্রাপ্ত পুরনো অবকাঠামো সংস্কার নতুন সরকারের জন্য রীতিমত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তদুপরি দীর্ঘদিন বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণেও প্রকৃত প্রস্তাবে মিয়ানমার হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্নপ্রায় ও একঘরে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক অম্লমধুর। এক সময় মিয়ানমারের পুরনো রাজধানী রেঙ্গুনের সঙ্গে বাঙালীদের নিবিড় সখ্য ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যসহ। দু’দেশের স্বার্থেই সেসবের পুনরুজ্জীবন প্রত্যাশিত। আশার কথা, সমুদ্রসীমানার ফলপ্রসূ মীমাংসা হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে এবং দু’দেশই তা মেনে নিয়েছে। অতঃপর রোহিঙ্গা সমস্যার জরুরী সমাধান কাম্য। মিয়ানমারকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, রোহিঙ্গারা জন্মসূত্রে সেদেশেরই নাগরিক। সুতরাং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিতে হবে নবগঠিত গণতান্ত্রিক সরকারকে। আমরা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্য কামনা করি।
×