ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেজাউল করিম খোকন

প্রতিটি দিনই হোক নারী অধিকার আদায়ের দিন

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৭ মার্চ ২০১৬

প্রতিটি দিনই হোক নারী  অধিকার আদায়ের দিন

সনাতনী সমাজ কাঠামো সত্ত্বেও গত এক শ’ বছরেরও বেশি সময়ে আমাদের দেশে নারীর অবস্থান বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের প্রতিটি স্তরেই নারীরা পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্যের দেখা। তাই একজন মা হিসেবে, একজন মেয়ে হিসেবে, একজন স্ত্রী হিসেবে নারীর যে চিরায়ত রূপ তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। পেশাগত জীবনে যে বৈচিত্র্য, যে বিভিন্নমুখী ধারা তার সব ক’টিতেই আজকের নারী তার অবস্থানকে শীর্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। শুধুমাত্র বিশ্ব প্রেক্ষাপটেই নয়, আজকের বাংলাদেশের নারীরা রয়েছেন পেশাগত উৎকর্ষতার শিখরে। আর এই শীর্ষে আরোহণ বা সফলতা লাভের বিষয়টি এখন বেশ নিয়মিত এবং সুস্পষ্ট। আজকের বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন তার মধ্যে প্রথমেই বলা যেতে পারে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থায় চাকরির কথা। মেয়েরা এখন শুধু বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষস্থানীয় পদে চাকরিই করছেন না বরং ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তাদের মানসিকতায়ও। কয়েক দশক আগেও প্রথাগত ‘হাউসওয়াইফ’ বা গৃহিণীর পরিচয় মুছে নারীরা এখন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের স্বতন্ত্র পেশাগত পরিচয়। সেই সঙ্গে মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজ করা নিয়ে সমাজের যে সংস্কার চালু ছিল তাও ধীরে ধীরে বদলে গেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণেই। এর ফলে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও আধুনিক মানসিকতার। নারীরা শুধু দেশীয় প্রেক্ষাপটেই নয় বরং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের দেশের মেয়েরা তাই সাবলীলভাবেই কাজ করছেন দেশী-বিদেশী ব্যাংকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, বহুজাতিক কোম্পানিতে। এছাড়া ফ্যাশন ডিজাইনিং, ফ্যাশন হাউসগুলোর শীর্ষপদে মেয়েদের অবস্থান এখন মোটেও ব্যতিক্রমী কোন চিত্র নয়। সৃষ্টিশীল কাজের পর যদি চোখ ফেরানো যায় শোবিজ জগতের দিকে তাহলেও নারীদের শীর্ষ অবস্থান চোখে পড়বে বেশ ভালভাবেই। মডেলিং থেকে অভিনয়, পরিচালনা থেকে প্রযোজনা, উপস্থাপনা চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রেই সার্থকতার সঙ্গে কাজ করেছে আমাদের দেশের মেয়েরা। নারীর শক্তি সামর্থ্য মেধা যোগ্যতায় যারা সংশয় প্রকশ করেন তারা অনেকেই ঠাট্টাচ্ছলে বলে থাকেন যে, নারীর ব্যবসায়িক বুদ্ধি নেই। কিন্তু এসব মানুষের সামনে যদি আমাদের দেশের নারী উদ্যোক্তাদের একটি তালিকা ধরিয়ে দেয়া যায় তবে তারা নিজেরাই হয়ত তাদের কথার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করবেন। আর ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের এই ব্যাপক অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছরই নারীদের দেয়া হচ্ছে সম্মাননা পুরস্কার। কাজের জগতে নিজেকে খাটি প্রফেশনাল প্রমাণ করতে পারাটা আজকের নারীর ন্যায্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। একজন প্রফেশনাল মেয়েকে প্রমাণ করতে হয় আর পাঁচজন পুরুষের চেয়ে তার কর্মদক্ষতা, ক্ষমতা, মেধা, গুণগত যোগ্যতা; কোন অংশে কম নয়। দায়িত্বজ্ঞান, প্রোডাক্টিভিটি, টিমওয়ার্ক সবকিছুতেই যে সে সবার সমান, এটা তার পেশাদারি ভূমিকায় সাফল্যের পরিচয়। ধরা যাক, একটি মেয়েকে প্রায়ই রাতের শিফটে কাজ করতে হয়। তখন সংসারে তার রাতের কাজগুলোও সমাধা করে তবেই কর্মক্ষেত্রে আসতে হয়। আবার যে মেয়েটি বাইরের ট্যুরে যাওয়া চাকরির অঙ্গ তাকে একটা সাপোর্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হয় সংসারে তার অনুপস্থিতির সময়ে। তবে এতকিছু আলোচনা করার পরও আমাদের দেশের শীর্ষ স্থানীয় নারীদের সম্পর্কে শেষ কথাটি বলা মুশকিল। কেননা পাদপ্রদীপের আলোয় আর জনপ্রিয়তার ধারায় যারা নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন তাদের বাইরেও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে যুক্ত আছেন অসংখ্য নারী। এই সাফল্যকে যারা অবমূল্যায়ন করেন, যারা ভাবেন এগুলো নারীর প্রতি প্রদত্ত বিশেষ সুবিধার ফল। তাদের শুধু বলতে হয় যে, এটা মোটেও অলৌকিক কোন বিষয় নয়। বরং কর্মব্যস্ত নারী, আত্মবিশ্বাসী নারী তা ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস আর পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করেছেন আজকের এ শীর্ষস্থান। নারীর অধিকারের বিষয়টি শুধু বিশেষ একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি দিনকেই নারী অধিকারের দিন হিসেবে দেখতে হবে। নারী হিসেবে জন্ম নেয়ার সার্থকতায় নারী যেন সদা সমুজ্জ্বল থাকে, সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে সবাইকে। তাহলেই এ দিনের বিশেষ দিন হিসেবে পালনের সার্থকতা থাকবে। বছরের প্রতিটি দিনই হোক নারীর অধিকার আদায়ের দিবস-এ কামনা আমাদের। ‘ ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : শ্রাবন্য তৌহিদা
×