ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসছে পেস শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফিরে আসছে পেস শিল্প

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আগে কখনও ভারতের বিপক্ষে টেস্ট বা টি২০ খেলেননি মোহাম্মদ আমির। ক্যারিয়ার শুরুর মাত্র এক বছরের মধ্যেই জড়িয়ে পড়েছিলেন এক ষড়যন্ত্রে, যার কারণে ৫ বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এর আগেই এক বছরে যে ঝড় তোলার সেটা ঠিকই তুলেছিলেন। আর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পুরনো যুগের পেস শিল্প তার মাধ্যমেই ফিরে আসছে আবার উপমহাদেশে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার খ—েগ পড়ে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিলেন। তবে আবার ফিরেছেন। এবার এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে টি২০ খেলতে নেমেছিলেন। শনিবারের ম্যাচে একের পর এক দুর্ধর্ষ সুইং, গতি আর শর্ট অব লেন্থ বল দিয়ে ভড়কে দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপকে। টি২০ ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। এই ম্যাচের পর থেকেই এখন আমির হয়ে উঠেছেন যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য সবচেয়ে বড় গবেষণার বিষয়বস্তু। আজ দুর্বলতর আরব আমিরাতকেও সেই আমিরের ভয়াল গতি ঝড় সামলাতে হবে। ক্যারিয়ারে মাত্র ১০৭ বল করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে! দুটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। উইকেট মাত্র দুটি। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৯ জুন ডাম্বুলায় ৯.৫ ওভার বোলিং করে ৫৬ রান দিয়ে কোন উইকেটই নিতে পারেননি। আর ভারত দূরে থাক কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলার সুযোগ পাননি তরুণ আমির টানা ৫ বছর। পরের মাসেই ইংল্যান্ড সফরে স্পট ফিক্সিং বিতর্কে জড়িয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জরিমানা ও কারাদ- হওয়া তিন ক্রিকেটারের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। তবে দোষ স্বীকার করে ভুলের কারণে ফাঁদে পা দিয়েছেন এমন দাবি করেছিলেন আমির। বয়স তখন সবে ১৮। এ কারণেই সবার সহানুভূতি পেয়েছেন, আর বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করে ফিক্সিংবিরোধী বিভিন্ন প্রচারে অংশ নিয়েছেন আইসিসির পক্ষে। তাই সবসময়ই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমিরকে ফেরানোর জন্য পিসিবিই সপ্রণোদিত হয়ে বার বার আইসিসির কাছে আবেদন করেছে। শেষপর্যন্ত ফিরেছেন আমির। তিন মাস আগে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট খেলে ফিরেই আগের ছন্দে আছেন সেটার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে নিয়েছেন তিনি। যদিও আমিরকে দলে ফেরানো নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। কিন্তু পিসিবির সমর্থনের কারণেই ফিরতে পেরেছেন। গত বছর শেষ দিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ তার জন্য অনেক বড় মঞ্চ হিসেবে কাজ করেছে ছন্দ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক আসর এটিই ছিল প্রথম তার জন্য। সেটার সুফল যেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে পুরোপুরিই করে নিয়েছেন। বিতর্কের মাঝে আমির নিজে কিছুই বলেননি। মাঠের নৈপুণ্য দিয়ে ক্রমেই তিনি জয় করে নিচ্ছেন ক্রিকেট ভক্ত সমর্থক আর সতীর্থ ক্রিকেটারদের মন। তার জন্য সবচেয়ে ভাল বিষয় ছিল টি২০ ক্রিকেটে অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির সহানুভূতি পাওয়া। তাছাড়া চিরশত্রু ভারতের বিপক্ষে এমনিতেই আলাদা এক আগুন থাকে পাক ক্রিকেটারদের মধ্যে। সেই আগুনের পুরোটাই ঢেলে দিয়েছেন আমির শনিবার ভারতের বিপক্ষে। ৪ ওভারের অবিশ্বাস্য এবং ভয়ানক একটি স্পেল শেষ করেছেন প্রতি মুহূর্তেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক হিসেবে বিরাজ করে। এশিয়া কাপ দিয়েই উপমহাদেশে যেন আবার পেস বোলারদের দিন ফিরে আসল। এমনও হয়েছে গত কয়েক বছরে স্পিনারদের দিয়ে প্রতিটি দল উপমহাদেশের উইকেটে বোলিং উদ্বোধন করিয়েছে দলগুলো। কারণ স্পিনবান্ধব উইকেট। ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেট, বর্তমান সময়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা উন্মুখ থাকে চার-ছক্কার মার দেখার জন্য। বোলিং দেখার সময়টা চলেই গেছে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ, কপিল দেব, চামিন্দা ভাস আর সর্বশেষ জহির খান ও শোয়েব আখতার দিয়েই যেন উপমহাদেশে পেসারদের যুগ শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। কারণ পেস সহায়ক উইকেট যেমন নেই, তেমনি টি২০ ক্রিকেটের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনে ব্যাটসম্যানদের জন্যই যেন সব নিয়ম এবং উইকেট বানিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এবার এশিয়া কাপে সেই স্রোতের বাইরে অভূতপূর্ব একটি উইকেট তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত এ অঞ্চলে ন্যাড়া ও ফ্ল্যাট উইকেট দেখা গেলেও এবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উইকেট তৈরি করা হয়েছে সবুজ ঘাসের। এমন উইকেটে পেসারদেরই দৌরাত্ম্য থাকে। আর ক্রমেই বাংলাদেশ দল পেস আক্রমণে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। গত কয়েকটি সিরিজেই বাংলাদেশী পেসাররা প্রতিপক্ষদের ভুগিয়ে নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর কারণেই এমন উইকেট। আর সেজন্যই এখন পর্যন্ত চলতি এশিয়া কাপে পেসারদের আগুনের বোলিং দেখা যাচ্ছে। এমনকি স্পিন সমৃদ্ধ ভারত ও বাংলাদেশ দলও এখন নির্ভর করছে পেসারদের ওপর। সেই আস্থার প্রমাণও দিয়ে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, নুয়ান কুলাসেকারা, ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ, আশিষ নেহরার পর জ্বলে উঠেছেন পাকিস্তানের আমির ও মোহাম্মদ ইরফানরা। উপমহাদেশে পেস শিল্পটা ফিরেই আসছে এমন ইঙ্গিতটা ভালভাবেই পাওয়া যাচ্ছে।
×