ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোরিয়ান টেলিকম ও আইওএম তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনবে

‘ডিজিটাল দ্বীপ’ হচ্ছে মহেশখালী

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

‘ডিজিটাল দ্বীপ’  হচ্ছে মহেশখালী

ফিরোজ মান্না ॥ চারদিকে জলরাশি, মাঝখানে ছোট ভূখ-। নাম তার মহেশখালী। পান চাষের জন্য এ দ্বীপের পরিচিতি দেশবাসীর কাছে অনেক আগে থেকেই। এবার এ দ্বীপটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিতি পাবে ডিজিটাল দ্বীপ হিসেবে। এজন্য হাতে নেয়া হয়েছে ‘কনভার্টিং মহেশখালী ইনটু ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্প। কোরিয়ান টেলিকম ও আইওএম গোটা দ্বীপটিকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসবে। এজন্য সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে। এ বছরই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরেই ডিজিটাল মহেশখালী হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে পর্যটন শহর কক্সবাজার জেলার একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হচ্ছে মহেশখালী। ৩৬২ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ওই এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘কনভার্টিং মহেশখালী ইনটু ডিজিটাল আইল্যান্ড’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী প্রকল্প হাতে নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি প্রকল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করে তা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কোরিয়ান টেলিকম (কেটি) ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাউগ্রেশন (আইওএম)। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক স্পেনের বার্সিলোনায় ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেস ২০১৬-তে যোগ দেন। সেখানেই ডিজিটাল মহেশখালী প্রকল্পটির বাস্তবায়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, কোরিয়ান টেলিকম ও আইওএম’র মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কনভার্টিং মহেশখালী ইনটু ডিজিটাল আইল্যান্ড চুক্তিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হারুনুর রশীদ, কোরিয়ান টেলিকমের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জন জিন উন ও আইওএম’র চীফ অব মিশন শরৎ দাস নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের আইটি-আইটিইএস টিম লিডার সামি আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা চুক্তির পর প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। মহেশখালী বাংলাদেশের অংশ হলেও এলাকাটি ছিল অনেকটা বিচ্ছিন্ন। এই দ্বীপ ভূমিতে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা দেয়া হবে। এখানকার মানুষের সঙ্গে আর শহরের মানুষের সঙ্গে কোন পার্থক্য থাকবে না। সমান সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করবেন। এতে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। তারা তখন ঘরে বসেই বিশ্বকে এক ভূখ- হিসেবে ভাবতে পারবেন। তাদের আর নদী-সাগার বিচ্ছন্ন করে রাখতে পারবে না। এই দ্বীপ ভূমির বাসিন্দাদের জন্য ব্যতিক্রম প্রকল্পটি এ বছরের শেষের দিকে বাস্তবায়ন শেষ হবে। কোরিয়ান টেলিকম, আইওএম এ দ্বীপটির মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণেই গোটা দ্বীপটি ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এতদিন এখানে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক দিয়ে অল্প কিছু মানুষ ইন্টারনেট সেবা নিতে পেরেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তখন সব মানুষই অল্প মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবেন। এ প্রকল্পের লক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মহেশখালী দ্বীপের প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। মহেশখালী দ্বীপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির আওতায় নিয়ে আসা হবে। একই সঙ্গে এলাকার মানুষকে দেয়া হবে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনের নানা সেবা। কনভার্টিং মহেশখালী ইনটু ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পটিকে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করানো হবে, যাতে অন্যান্য প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকাকে ডিজিটালে রূপান্তরে এ মডেলটি অনুসরণ করা যায়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর কোরিয়ান টেলিকমের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জন জিন উন বলেন, আমরা আনন্দিত যে, মহেশখালী আইল্যান্ডকে ডিজিটালে পরিণত করার জন্য কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আইওএম’র পরিচালক মিস লরা বলেন, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তি অনুসারে কোরিয়ান টেলিকম উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যাকবোন অবকাঠামোসহ মহেশখালী ও কক্সবাজার এলাকার মানুষের চাহিদা বিশ্লেষণ করে পর্যটন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে আইওএম এলাকায় মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সরকারের অন্যান্য সংস্থা, কেটি ও আইওএম’র সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশে এটিই প্রথম প্রকল্প যে, একটি দ্বীপ ভূমিকে পুরোপুরি ডিজিটাল করা হচ্ছে। এ রকম আরও যেসব এলাকা রয়েছেÑ পর্যায়ক্রমে ওই সব এলাকাও ডিজিটাল প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
×