ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পিটারের জালিয়াতি

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পিটারের জালিয়াতি

বার বার ঘুঘুর ধান খেয়ে যাবার সংবাদটি লোকপ্রবচনে ঠাঁই পেলেও পিটারের ক্ষেত্রে তা সত্য হতে পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে জাল-জালিয়াতি নির্বিঘেœ সম্পন্ন করে এসে শেষ পর্যন্ত পিটার ধরা পড়েছে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে। কে এই পিটার? এ পর্যন্ত পিটারের যতটুকু পরিচয় মিলেছে, তাতে বলতেই হয় যে, সে একজন আন্তর্জাতিক ফ্রড বা জালিয়াত। পিটারের পুরো নাম পিটার স্কেজেফান মাজুরেক। জন্মসূত্রে মূলত ইউক্রেনের নাগরিক হলেও জনৈক পোল্যান্ডবাসীর পাসপোর্ট চুরি করে সে বাংলাদেশে এসেছিল সেদেশের নাগরিক হিসেবে। ধরা পড়ার পর তার কাছে জার্মান নাগরিকত্বের প্রমাণও মিলেছে। এ দেশে আসার আগে পিটারের বিচরণস্থল ছিল পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আফ্রিকা। সেসব দেশে সে প্রায় নির্বিঘেœ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ এমনকি বিভিন্ন খ্যাতনামা চেইন শপ থেকে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এহেন পিটারের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে লন্ডন প্রবাসী এক বাংলাদেশী, এক বুলগেরিয়ান, এক ইউক্রেনী তথা আন্তর্জাতিক মুদ্রা ও মানবপাচার চক্রের সঙ্গে। তারাই পিটারকে বাংলাদেশে পাঠায় এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলনের জন্য। প্রাথমিকভাবে পিটার সফলও হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ইউসিবিএল ও সিটি ব্যাংকের কয়েকটি বুথ থেকে সে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েক লাখ টাকা। পিটারের টাকা চুরির পদ্ধতিটিও অভিনবই বলা চলে। সে এটিএম বুথে ঢুকে কার্ড রাখার স্থানে স্কিমিং ডিভাইস ঢুকিয়ে তথ্যাদি চুরি করে গ্রাহকের। এরপর নকল এটিএম কার্ড বানিয়ে সুবিধামতো তুলে নেয় টাকা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ পিটারের স্কিমিং ডিভাইসে অন্তত ১২শ’ এটিএম কার্ডের তথ্য পেয়েছে। অবশ্য এ কাজে পিটার স্বভাবতই এদেশীয় দোসর এমনকি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছে। পিটারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাও ধরা পড়েছে। অন্যদের ধরার প্রস্তুতি চলছে। কেউ কেউ পালিয়েছে বলেও জানা যায়। পিটার ইতোমধ্যে বাংলাদেশী এক মহিলাকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে এবং বাবা হয়েছে সন্তানের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিটার বলেছে, তাকে বোঝানো হয়েছিল যে, এখানে ব্যাংকিং বুথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল ও নাজুক। সুতরাং সহজেই সে সফল হবে। বুথগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা তথা সিসিটিভি সম্পর্কে পিটার অবহিত ছিল না, এমনটি ভাবা বোধহয় ঠিক নয়। এমন তো হতে পারে যে, এদেশীয় দোসর ও এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা পিটারকে ক্রমাগত তথ্যাদি ও সাহস জুগিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশের সকল সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক পরিচালিত এটিএম বুথগুলোতে এক মাসের মধ্যে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে শুধু নির্দেশ দিলেই হবে না, নিয়মিত নজরদারিসহ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও নিতে হবে। দেশে ইতিপূর্বে সংঘটিত বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, যুবক, ডেসটিনি ইত্যাদির জাল-জালিয়াতিসহ প্রতারণা কার্যক্রম আমরা দেখেছি। বলতেই হয় যে, সেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ তদারকিসহ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে যথাসময়ে। এটিএম কার্ড জালিয়াতির বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত হলেও, নিশ্চয়ই এর প্রতিকার ও প্রতিবিধান আছে। বাস্তবেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে চাই। ব্যাংক-বীমা হলো সর্বসাধারণের শেষ ভরসার স্থল। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং ব্যবস্থার শতভাগ নিরাপত্তা বিধান জরুরী ও অপরিহার্য।
×