ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশী সহায়তা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশী সহায়তা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নয়নসহযোগীরা। এজন্য এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), সুইডেন, জাইকা ও চীন ঋণ-অনুদান মিলে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলোও তাদের সহায়তার পরিমাণ বাড়াচ্ছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বিষয়ে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে জন্য ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা এযাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যয়ের লক্ষ্য। মোট ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আগামী ৫ বছরে মোট যে ব্যয়ের (বিনিয়োগ) লক্ষ্য ধরা হয়েছে তার মধ্যে সরকারী ব্যয় ৭ লাখ ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং বেসরকারী খাত (বৈদেশিকসহ) থেকে ২৪ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এজন্য বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন। তাছাড়া বিডিএফ বৈঠকে উন্নয়নসহযোগীরা যে অঙ্গীকার করেছে সে অনুযায়ী সহায়তা আরও বাড়বে বলে আশা করছি। সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে মধ্য আয়ের দেশে যেতে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো, বিনিয়োগকারীদের দ্বারা চিহ্নিত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, পাবলিক বিনিয়োগ ঘাটতি দূর করতে আধুনিকায়ন পরিকল্পনা তৈরি, বিদ্যুত ও জ্বালানির সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও ভর্তুকির পরিমাণ যুক্তিযুক্তকরণ, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব পুনর্গঠন ও গতিশীলতা আনয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, পোশাক খাত থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অ-পোশাক রফতানি খাতের জন্য উদ্দীপক কাঠামোর উন্নতিকরণ, রফতানি সম্ভাবনাসহ কৃষি কৌশল পুনর্বিবেচনা করা, কৃষকদের ভাল প্রণোদনা প্রদানে মূল্য নীতি প্রণয়ন ও গ্রামীণ অবকাঠামোর ওপর বেশি জোর প্রদান করা, পশু ও মৎস্য ক্ষেত্রে মনোযোগ সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রমাণভিত্তিক নিরূপণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের সাহায়্যে সঠিক কৌশল নির্ধারণ করা এবং আইসিটি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট বিধিগত এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা ও এর সুনির্দিষ্ট সমাধানের জন্য একটি সমীক্ষা পরিচালনা করা। গত নবেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠকের বিভিন্ন আলোচনায় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় জেন্ডার সমতা আনয়ন ইত্যাদি খাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও যৌথ ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ এবং টেকসই উন্নয়নে সরকার ও উন্নয়নসহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির অঙ্গীকার করা হয়। সেই অঙ্গীকারেরই প্রতিফল হিসেবেই সহায়তা বৃদ্ধি হচ্ছে বলে জানা গেছে। ৫ বছরে বিশ্বব্যাংক দেবে ৮১ হাজার কোটি টাকা ॥ কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশকে ১ হাজার ১০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকার বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি বছর ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে এই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ সহায়তা দেয়া হবে। প্রত্যেকবার চার বছর মেয়াদী সহায়তা দেয়া হলেও এবারই প্রথম সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে পাঁচ বছর মেয়াদী সহায়তা কৌশল করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্তকরণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহরিন এ মাহবুব। বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মাধ্যমে সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে থাকে। এ ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংককে দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এ ঋণ ১০ দশ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর আগে সর্বশেষ চার বছর মেয়াদী সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্কে বিশ্বব্যাংক প্রায় ৬ বিলিয়ম মার্কিন ডলার সহযোগিতা দিয়েছিল। কিন্তু এবার সেটি বাড়িয়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করা হচ্ছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কোন অঙ্ক ইআরডিকে জানায়নি বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডাইরেক্টর ইফফাত শরীফ এর আগে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা পাঁচ বছর মেয়াদী যে কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছি সেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদ্যুত খাতকে। পাঁচ বছরে এডিবি দেবে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ॥ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্রাটেজির আওতায় আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০ পর্যন্ত) বাংলাদেশে বড় অঙ্কের সহায়তা দিচ্ছে। এর পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। প্রতি বছর ২ বিলিয়ন মর্কিন ডলার অর্থাৎ ১৬ হাজার কোটি টাকা করে এই অর্থ পাওয়া যাবে। এ স্ট্রাটেজির খসড়া তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে বলে এডিবির ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে গত ৫ বছরের তুলনায় আগামী ৫ বছরে সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে। এ সহায়তা দেয়া হবে এডিবি। এডিবি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রতি বছর গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যা বর্তমানে জিডিপির ২৯ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশী সহায়তা লাগবে, যা সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। সে অনুযায়ী এডিবি এই স্ট্রাটেজি তৈরি করেছে। এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে এডিবির সহায়তা প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ছিল মোট ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ম মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সহজ শর্তের ঋণ ছিল অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক ছিল কঠিন শর্তের ঋণ। তার আগের পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এডিবি সহায়তা দিয়েছিল মোট ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ওসিআর (সহজ শর্তের) ঋণ ছিল ২ বিলিয়ন এবং এডিএফ (কিছুটা কঠিন শর্তের) ঋণ ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুইডেন অনুদান দিচ্ছে ১৪০৮ কোটি টাকা ॥ বাংলাদেশকে বড় অঙ্কের অনুদান দিচ্ছে সুইডেন। এর পরিমাণ হতে পারে প্রায় এক হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। আগামী পাঁচ বছরে এ অনুদান সহায়তা করবে দেশটি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহার ফ্রাইসেল। তবে দেশটি কত টাকা দেবে তা এখনও নিশ্চিত করেনি। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন অতীতের মতোই তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সুইডেন ডেস্কের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, একটি আমব্রেলা চুক্তি হবে। এই চুক্তির আওতায় পরবর্তীতে প্রকল্পভিত্তিক অনুদান সহায়তা দেবে সুইডেন। এ কারণে সুনির্দিষ্ট করে টাকার অঙ্ক না জানালেও ধারণা করা হচ্ছে অতীতের মতো ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন এইইকে (সুইডিস কোনাল) বা ১৪শ’ ৮ কোটি টাকা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর এগ্রিমেন্ট বিটুইন সুইডেন এ্যান্ড বাংলাদেশ অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন শীর্ষক একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে জানানো হয় সেদেশের কেবিনেটে অনুমোদন না হওয়ায় কিছুটা দেরি হবে। বড় ছয় প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে জাইকা ॥ বড় ছয় প্রকল্প বাস্তবায়নে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। জাপান সরকারের ৩৬তম ওডিএ লোন প্যাকেজের আওতায় সংস্থাটি ১০৭ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইআরডি সূত্র জানায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) লিমিটেডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন সঞ্চালন লাইন শক্তিশালীকরণে দুই হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থ বিভাগের বিদেশী বিনিয়োগ উন্নয়ন প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পশ্চিমাঞ্চলের সেতু উন্নয়নে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের নগরে ভবনের ঝুঁকি কমানো প্রকল্পে ৭৬০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা গবর্নেন্স উন্নয়ন প্রকল্পে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। এ ঋণের বার্ষিক সুদের হার মাত্র দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সংস্থাটির সুদের হার বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী বিশ^ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), রাশিয়া, চীনের তুলনায় অনেক কম। আবার ঋণের অর্থের একটি বড় অংশ অনুদান হিসেবে প্রদান করে জাইকা, যা পরবর্তীতে জাপান ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (জেডিএফ) মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জাপান উইংয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন প্যাকেজের আওতায় বড় অঙ্কের অর্থ পেলেও গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা কম ঋণ দিচ্ছে জাইকা। ইআরডি গঙ্গা ব্যারেজসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পে আরও অর্থায়নের প্রস্তাব দিলেও সংস্থাটি রাজি হয়নি। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা এবং অগ্রাধিকার প্রকল্প প্রস্তাব না থাকায় অর্থায়ন কমতে পারে। তবে জাইকার পক্ষ থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়নি। তিনি বলেন, জাইকার আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতায় আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে। জাইকা গত বছর ৩৫তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় পাঁচ প্রকল্পে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেয় জাইকা। সংস্থাটির অর্থায়নে প্রায় অর্ধশত প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, প্রাকৃতিক গ্যাসের দক্ষতা উন্নয়ন, ইনক্লুসিভ সিটি গবর্নেন্স, হাওরের বন্যা ব্যবস্থাপনা এবং জীবিকার উন্নয়ন, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কৃষি উৎপাদনের উন্নয়ন এবং বৈচিত্র্যায়নে অর্থায়ন প্রকল্প। চীন দিচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ॥ বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা (৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এর আগে ১১টি প্রকল্প স্তবায়নে এ পরিমাণ ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রস্তাবে দেশটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এ প্রেক্ষাপটে গত বছরের প্রথম কোয়াটের অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া) আসিফ-উজ-জামান সেসময় জনকণ্ঠকে জানান, আমরা চীনের কাছে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এখনও আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে। আমাদের দিক থেকে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের কাছে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রজেক্ট, এটি বাস্তবায়নে চীনের কাছে চাওয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ডিপিডিসির বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চাওয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (৯৫ কোটি মার্কিন ডলার)। কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে চাওয়া হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৮০ কোটি মার্কিন ডলার)। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা (৩৩ কোটি মার্কিন ডলার)। ইআরডির হিসাবে চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পের গ্র্যান্ট এলিমেন্ট ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বর্তমানে চলমান প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ড সাত বছর, সুদের হার ১ দমশিক ৫০ শতাংশ। প্রস্তাবিত প্রকল্পে সুদের হার ২ শতাংশ। ঋণগুলো ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে আরও রয়েছে দশমিক ২ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি ও ম্যানেজমেন্ট ফি দশমিক ২ শতাংশ। অন্যান্য ফি মিলে প্রায় ৫ শতাংশের ওপরে সুদ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
×