ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড্রামের ভেতর থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ড্রামের ভেতর থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২ ফেব্রুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জে অপহরণের চার দিন পর দুপুরে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল্লাহর লাশ একটি ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রুহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচর এলাকার মোতাহার হোসেনের বাড়ির ছাদ থেকে মঙ্গলবার লাশটি উদ্ধার করা হয়। আব্দুল্লাহ পশ্চিম মুগারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। শিশুটির লাশ একটি সবুজ রংয়ের ড্রামের ভেতর রাখা ছিল। ঘটনার পর থেকে শিশুটির প্রতিবেশী মোতাহার পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় মেহেদী (১৮), খোরশেদ (৩১), আলামিন (১৮) ও মিতু (২১) নামে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। মেহেদী ও মিতু সম্পর্কে ভাইবোন। শিশুটির লাশ পাওয়ার খবরে উত্তেজিত গ্রামবাসী মোতাহারের মালিকানাধীন মার্কেট ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু এর আগেই টিনসেড মার্কেট ও বাড়িটি আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। গত শুক্রবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের রুহিতপুর মুগারচর বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে নানা মারফত আলী কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। পরে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে একটি নম্বর থেকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের দাবি, অপহরণকারীদের কথামত তারা দুই দফায় কয়েকটি নাম্বারে ২ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছেন। শিশুটির লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা সার্কেল এএসপি রামানন্দ সরকারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ডিউটি অফিসার কিবরিয়া জানান, লাশ উদ্ধারের পরই উত্তেজিত গ্রামবাসী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোতাহার হোসেনের মালিকানাধীন একটি টিনসেড মার্কেট ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি ফেরদাউস হোসেন বলেন, শিশুটিকে হত্যা পর লাশ ড্রামের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। এর আগে এসিড দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ঘাতকরা। লাশ ভর্তি ড্রামের পাশ থেকে এ্যাসিড ভর্তি একটি সাদা রংয়ের ছোট ড্রাম পাওয়া গেছে। শিশুটির শরীরে এসিড ঢালার ফলে শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার ছেলের মৃত্যুর সংবাদে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা বাদল মিয়া ও মা রিনা বেগম। বাদল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার নিষ্পাপ শিশুকে কেন হত্যা করল পাষ-রা। যত টাকা লাগত, আমি দিতাম। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। তার এমন আকুতিতে উপস্থিত লোকজন চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। স্থানীয়রা জানান, শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাদের আটক করা হয়েছে, তারা শিশুটিকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী যে মানববন্ধন করে সেখানেও অংশ নেয়। বিভিন্ন সময় তারা ওই পরিবারে গিয়ে সান্ত¡না দিত। আশ্বস্ত করত। নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর থেকে জানান, অপহরণের পর মির্জাপুরে দুই স্কুলছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রের সন্ধান করছে। আদালতে নিহত ইমরানের চাচাত ভাই মিল্টনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাতে ধামরাই উপজেলার চরচৌহাট গ্রামের তিনজনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে বাহাদুর নামে একজনকে আটকের কথা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল আলম স্বীকার করেছেন। এর আগে সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা সারোয়ারের আদালতে মিল্টন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। শুক্রবার বিকেলে মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের একটি লেবুখেত থেকে ধামরাইয়ের চরচৌহাট গ্রামের দুই স্কুলছাত্র শাকিল ও ইমরানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
×