ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

আজ সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমৃত্যু সংস্কৃতির শানিত হাতিয়ারকে সঙ্গী করে পথ চলেছিলেন ওয়াহিদুল হক। সুর ও সংস্কৃতির শক্তিতে ভর করে লড়েছেন অসুরের বিরুদ্ধে। কাজ করেছেন সৃজনশীল ও মননশীল সমাজ গড়ার আকাক্সক্ষায়। এই বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সংগঠকের নবম প্রয়াণবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে তাঁরই শ্রম ও মননে গড়া সংগঠন ছায়ানট। সকাল থেকেই শুরু হবে স্মরণের এ আয়োজন। সকাল সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত গানে গানে স্মরণ করা হবে এই গুণীজনকে। এ পর্বে ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা তাঁকে নিবেদিত বেশকিছু সম্মেলক গান পরিবেশন করবে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার অনুষ্ঠানসূচীতে রয়েছে তাঁকে স্মরণ করে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ পর্বে ওয়াহিদুল স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক নুরুল আনোয়ার। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে ছায়ানট, নালন্দা, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন, সরোজ সংস্কৃতি-বৃত্ত ও ব্রতচারী বাংলাদেশ। স্মরণানুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। দেশের সংস্কৃতিচর্চার পথ নির্মাণে অগ্রপথিক ছিলেন ওয়াহিদুল। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান সংস্কৃতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বাঙালীত্বের গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য আজীবন মানুষ গড়েছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন ওয়াহিদুল হক। তিনি ছিলেন বাংলার মানুষের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মননের আজীবন সঙ্গী। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ছায়ানট আন্দোলন ও একে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান ‘কণ্ঠশীলন’, মৃত্যুর কিছুদিন আগে গড়ে তোলা ‘নালন্দা’ প্রতিষ্ঠা এবং তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠা করা ওয়াহিদুল হকের অনন্য কীর্তি। এর পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করে সারাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান তিনি। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের (পরে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং একাত্তরের স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। এছাড়া আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলনের সঙ্গে তিনি আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। ওয়াহিদুল হক অবজারভারের শিফট ইনচার্জ ও ডেইলি স্টারের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। দ্য পিপল পত্রিকায় সম্পদনা বিভাগে কাজ করেছেন। নিউ নেশন ও মর্নিং নিউজেও তিনি কাজ করেন। এছাড়া প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের খ-কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। জীবনের শেষ দিকে ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ ও ‘এখনও গেল না আঁধার’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়। ওয়াহিদুল হকের পুরো নাম আবুল ফারাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের ভাওয়াল মনোহরীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবু তৈয়ব মাজহারুল হক ও মা মেওয়া বেগম। ১৯৫০ সালে তিনি আরমানিটোলা গবর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা কলেজ ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী সন্জীদা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তানরা হলেনÑ অপালা, রুচিরা ও পার্থ। পরবর্তীকালে তিনি সঙ্গীতশিল্পী ফ্লোরা আহমেদকে বিয়ে করেন। এ পক্ষের ছেলের নাম এষণ।
×