ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রদ্ধা ভালবাসায় সঙ্গীতজ্ঞ নূরুল আলমের বিদায়

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

শ্রদ্ধা ভালবাসায় সঙ্গীতজ্ঞ নূরুল আলমের বিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবন আর সঙ্গীতকে এক সূত্রে বেঁধেছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ খোন্দকার নূরুল আলম। শেষ হলো তাঁর এই সুরাশ্রিত জীবনবন্ধন। আপন কীর্তিটাকে রেখে শরীরীভাবে চলে গেলেন শিল্পী। নিভৃতচারী এই সুরকারকে চিরতরে বিদায় জানানো হলো শনিবার। ভাষা শহীদদের স্মারক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিদায়বেলায় শীতের সকালে শিল্পীকে নিবেদন করা হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিদায়ী যাত্রায় সঙ্গীতাঙ্গনসহ নানা ভুবনের বিশিষ্টজন ও প্রতিষ্ঠানের ভালবাসায় সিক্ত হলেন শিল্পী। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় নূরুল আলমকে। বারডেম হাসপাতালের হিমাগার থেকে বেলা ১১টায় নূরুল আলমের শবদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। রাখা হয় মিনারের উল্টো পাশের গগন শিরীষ বৃক্ষের ছায়াতলে। এখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ঘণ্টাব্যাপী এই শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন পর্বে খুব বেশি মানুষের ভিড় জমেনি। অনুপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতাঙ্গনের অনেকেই। তবে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা খোন্দকার নূরুল আলমের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা ও তাঁর কীর্তির প্রতি জানিয়েছেন বেদনাবিধূর অভিব্যক্তির প্রকাশ। এছাড়াও অনেকে শোক বইয়ে মন্তব্য লিখে শিল্পীর প্রতি জানিয়েছেন তাঁদের অনুরাগের কথা। জোটের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন এই সুরস্রষ্টার সহধর্মিণী কিশওয়ার খোন্দকার এবং দুই ছেলেমেয়ে আবির খোন্দকার ও আমানী খোন্দকার। শবদেহ শহীদ মিনারে আনার পরপরই উপস্থিত হন নূরুল আলমের দীর্ঘ জীবনের সহকর্মী গীতিকবি রফিকুজ্জামান। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে তিনি বলেন, যাঁর কাছে আমার সঙ্গীত জীবন সর্বোতভাবে ঋণী তার সম্পর্কে বলা আমার পক্ষে কঠিন। তাঁর মতো এমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সুরকার আমার জীবনে খুব কম দেখেছি। তিনি যা কিছু করেছেন তার সবটাই মৌলিক। একজন সঙ্গীত পরিচালককে যে সাহিত্যও বুঝতে হয়Ñ এই উপলব্ধিটাও তাঁকে দেখে বুঝেছি। আমরা কত বড় একজন মানুষকে হারালাম তা অনুভব করা দরকার। হয়ত তরুণরা ভাবতে পারছে না আজ তারা কার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হলো। খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, তার মতো এমন আত্মসচেতন মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। কোন অন্যায়কে কোনদিন ছোট করে দেখেননি। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি বলেই চির অভিমানে জীবন কাটিয়েছেন। আমি এমন নির্মোহ বন্ধু হয়ত পাব না। বাংলাদেশ হয়ত এমন মেধা ও মননশীল মানুষ পাবে না। তার করা সুরে কণ্ঠ বসিয়ে অনেকেই বিখ্যাত হলেও আজ তাঁর বিদায়ী দিনে সেই সব শিল্পীরা আসেননি। প্রিয়জনকে হারানোয় আক্ষেপ করে সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান বলেন, তিনি ছিলেন আমার জীবনের সঙ্গীতগুরু। গানের ভুবনে আজীবন তাঁকেই আদর্শ হিসেবে মেনেছি। এই জীবনে যতটুকু জেনেছি তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি। আজ মনে হচ্ছে, মাথার ওপর থেকে হাতটি সরে গেল। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, অবিনাশী সুরের স্রষ্টা ছিলেন খোন্দকার নূরুল আলম। একজন সুরস্রষ্টা যে কতটা আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হতে পারেন তার উদাহরণও তিনি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, তাঁর প্রতিভার প্রকাশ তার গানে ও সঙ্গীত পরিচালনায়। কে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসল কে আসল নাÑ সেটা কোন বিষয় না। আপন কীর্তির মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি। এছাড়াও শিল্পীকে ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানান বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, কবির বকুল, সঙ্গীতশিল্পী রফিকুল আলম, সঙ্গীত পরিচালক ফোয়াদ নাসের বাবু, আকতারুল ইসলাম প্রমুখ। সাংগঠনিকভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, শিল্পকলা একাডেমি, মিউজিশিয়ান ফোরাম, বাংলার মুখ, ক্রান্তি, বহ্নিশিখা ও শিল্পিত। শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন খোন্দকার নূরুল আলম।
×