ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৮৭ ভাগ নারী সন্তান প্রসবের আগে মেডিক্যাল পরীক্ষার সুযোগ পায় না

স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত বস্তির নারীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত বস্তির নারীরা

নিখিল মানখিন ॥ রাজধানীর বস্তি এলাকার নারীরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পায় না। বস্তির শতকরা ৮৭ ভাগ মহিলা সন্তান প্রসব করার আগে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর সুযোগ পান না। ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এক-তৃতীয়াংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীদের অসহযোগিতার কারণে শতকরা ৮৫ ভাগ মহিলার স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না। আইসিডিডিআরবি এবং পপুলেশন কাউন্সিল চালিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়েছে। রাজধানীর মহাখালী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বস্তিতে এক গবেষণা চালায় আইসিডিডিআরবি এবং পপুলেশন কাউন্সিল। প্রায় সাড়ে হাজার বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলেন, গবেষণা দলের সদস্যরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বস্তি এলাকার শতকরা ৭৩ ভাগ নারী শারীরিক ও লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হয়। বস্তিতে বাল্য বিবাহের মাত্রা খুবই বেশি। মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সম্মতি গুরুত্ব দেয়া হয় না। শতকরা ৬১ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় তাদের অভিভাবকদের সম্মতিতে। যৌতুকের শিকার হন শতকরা ৩১ ভাগ মহিলা। ইচ্ছের বাইরে বিয়ে হয় ২৮ ভাগ মেয়ের। অধিকাংশ মহিলার যৌন শিক্ষা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিষয়ে ধারণা নেই। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে জটিল রোগ সংক্রমিত হতে পারে তা অনেক নারীই জানেন না। শতকরা ৯০ ভাগ মহিলা তাদের স্বামীর দ্বারা খারাপ আচরণের শিকার হন। শারীরিক বা যৌন হয়রানির শিকার হন শতকরা ৭৬ ভাগ নারী। অবিবাহিত মেয়েদের অধিকাংশই বাড়িতে নানা সহিংসতার অভিজ্ঞতা পান। নিজ পরিবার ও বাইরে বস্তির নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। প্রতিটি মুহূর্তে তাদেরকে আতঙ্কে থাকতে হয়। স্বাস্থ্যসেবার চেয়ে তাদেরকে প্রতিনিয়ত দু’বেলা খাবার ও কোন রকম বেঁচে থাকার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের কেউ কেউ গোপন করে যান। আর স্বামীকে জানালেও সহযোগিতা পান না। গর্ভবর্তী মায়েরা হয়ে পড়েন চরম অসহায়। হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেয়ার সুযোগ পর্যন্ত থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্তান প্রসব দেয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বস্তিবাসীদের আচরণ পরিবর্তনে তথ্য ও জ্ঞান বিতরণ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে নানা কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। এ সব উদ্যোগের মধ্যে অবশ্যই সন্তান জন্মদান এবং যৌন স্বাস্থ্য অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাসস্থান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এদিকে, অভিাযোগ উঠেছে যে, বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সমস্যায় রয়েছে সরকার। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে। সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনায় একটি প্রকল্পও চালু রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বস্তিবাসীদের কাছে পৌঁছায় না। নগরীর কিছু এলাকায় মাতৃসেবা কেন্দ্র রয়েছে। শুধুমাত্র দিনের বেলায় খোলা থাকার কারণে অন্যের বাসায় কাজে ব্যস্ত বস্তির মহিলারা সেখানে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনও বস্তির ৮৫ শতাংশ মায়েরই বাড়িতে ঝুঁকির মধ্যে প্রসব করানো হচ্ছে। মাত্র ১৫ শতাংশ মা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করানোর সুযোগ পান। বস্তিবাসীর মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার অনেক বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০১৫ সালের মধ্যে এক লাখ জীবিত সন্তান জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৪৩ এ নামিয়ে আনতে হবে। অথচ বস্তি এলাকায় ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে। ৪৬ শতাংশ গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতায় ভোগেন। গর্ভকালীন বা প্রসব জটিলতার কারণে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নারী দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন। শতকরা ৫৮ ভাগ ২০ বছর বয়সের আগেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেয়। এ বয়সের জন্য যথাযথ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য ও সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ অপর্যাপ্ত। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৬ মিলিয়ন কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়, যাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই ইতোমধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
×