ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় টাকা ৪৩ পয়সা দরে বিদ্যুত দেবে ত্রিপুরা বৈঠকে মতৈক্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

ছয় টাকা ৪৩ পয়সা দরে বিদ্যুত দেবে ত্রিপুরা বৈঠকে মতৈক্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ পর্যন্ত প্রতি ইউনিট সাড়ে পাঁচ রুপী (৬ টাকা ৪৩ পয়সা) ঠিক হলো ত্রিপুরার বিদ্যুতের দর। শনিবার দিনভর কারিগরি কমিটির বৈঠকে ওই দর নির্ধারণ হয়। আর বিকেলে হোটেল সোনারগাঁয়ে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তা ঘোষণা দেয়া হয়। দাম ঠিক না হওয়ায় ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিনিময় আটকে ছিল। এখন যে কোন মুহূর্তে এই বিদ্যুত বাংলাদেশে আসতে পারে। যদিও ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যুত আসবে। ত্রিপুরার বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এখানে কোন ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নেই।ু ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ হিসেবে ত্রিপুরার সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তিটি (পিপিএ) হবে। কেবল বিদ্যুত দিলেই ত্রিপুরা দাম পাবে। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ এবং ত্রিপুরার কারিগরি কমিটি ঢাকায় আলোচনায় বসে। কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দামের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়। বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. কায়কাউস আহমেদ আর ভারতের পক্ষে সে দেশের বিদ্যুত বিভাগের পরিচালক ঘনশ্যাম প্রসাদ। অন্যদিকে সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁয়ে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ত্রিপুরার বিদ্যুত, গ্রাম, শহর উন্নয়ন এবং পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে। ওই বৈঠকে বিদ্যুতের দামটি চূড়ান্ত হওয়ার পর ঘোষণা দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মানিক দে জানান, বিদ্যুতের দাম অনেক কারিগরি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে দাম যাই হোক এই বিদ্যুত বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্যরে নিদর্শন হয়ে থাকবে। দুই দেশের গ্রিড লাইন প্রস্তুত রয়েছে যে কোন মুহূর্তে বিদ্যুত দেয়া যেতে পারে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, সাড়ে পাঁচ রুপী বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দামে চুক্তি হবে পাঁচ বছরের জন্য। আমরা প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত নেব। তবে বিদ্যুত না নিলে আমাদের কোন টাকা দিতে হবে না। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং সরকারের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর আগামী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শনিবার দিনের প্রথম বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ত্রিপুরা প্রথমে বিদ্যুতের দর ছয় দশমিক ২৫ রুপী দাবি করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনায় বাংলাদেশ দশমিক ৭৫ রুপী প্রতি ইউনিটের দর কমাতে সক্ষম হয়। এর আগে ২৭ ও ২৮ নবেম্বর সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতি ইউনিটের জন্য ৬ সেন্ট (৪ টাকা ৭৫ পয়সা ) প্রস্তাবের বিপরীতে ভারত ইউনিট প্রতি ৯ সেন্ট (৭ টাকা ১৩ পয়সা) দাবি করে। পরে ভারত এক সেন্ট ছাড় দিতে সম্মত হয়। বাংলাদেশ-ভারত উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটল থাকলে বৈঠকে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হয়নি। এজন্য ১৬ ডিসেম্বর ত্রিপুরা-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুত বিনিময়ের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ নিজের নদীতে বাঁধ দিয়ে ত্রিপুরার পালাটান বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ভারি যন্ত্রাংশ ভারতে পৌঁছাতে সহায়তা করে। ভারত সরকার তখনই ওই প্রকল্প থেকে কৃতজ্ঞতা আর সৌহার্দ্য্েযর নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে বিদ্যুত কেন্দ্র চালুর দীর্ঘ সময় পরও বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। বাংলাদেশের আগ্রহে ভারত আবার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আনে। ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আনতে কুমিল্লা ও ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন করেছে উভয় দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন এই গ্রিড লাইনটি ত্রিপুরার সুরজমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লাকে সংযুক্ত করছে। বাংলাদেশ অংশের ৪০০ কেভি ক্ষমতার আন্তঃদেশীয় ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি. (পিজিসিবি)। ‘ত্রিপুরা (ভারত) কুমিল্লা দক্ষিণ (বাংলাদেশ) গ্রিড ইন্টারকানেকশন প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়। কুমিল্লা (দক্ষিণ) সাবস্টেশন থেকে কুমিল্লা (উত্তর) সাবস্টেশন পর্যন্ত ১৩২ কেভি ডবল সার্কিটের আরও ১৯ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে প্রতিদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এরমধ্যে ভারতের সরকারী খাত থেকে প্রতিদিন ২৫০ মেগাওয়াট, বেসরকারী খাত থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসছে। এই বিদ্যুত এলে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৬০০ মেগাওয়াটে। এছাড়াও ভারত সরকারের কাছ থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
×