ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রনির স্বপ্নে বোলিং অলরাউন্ডার

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

রনির স্বপ্নে বোলিং অলরাউন্ডার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বোলিংটা যে আবু হায়দার রনির কী রকম, তা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) মাধ্যমে সবারই জানা হয়ে গেছে। দেশী বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ উইকেট নিয়েছেন রনি। ‘ইনসুইং’ দিতে পারেন। ‘আউট সুইং’ও দিতে পারেন। ‘স্লোয়ার’ করতে পারেন। ‘কাটার’ মারতে পারেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ যেটি, ‘ইয়র্কার’ও অহরহ করতে পারেন! আবার বাঁহাতি বোলারের সবচেয়ে বড় গুণ যেটি ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল ভেতরে আনা, ওয়াসিম আকরাম বা চামিন্দা ভাসের মতো সেটাও করতে পারেন রনি। একজন বোলারের মধ্যে যখন এত গুণ, স্বাভাবিকভাবেই তাকে নিয়ে সবাই ভাবতে বাধ্য। বিশেষ করে নির্বাচকরা। ভেবেছেনও। তাই তো জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম দুই টি২০র জন্য ঘোষিত দলে রনি আছেন। সুযোগ পেলেও দলকেও প্রতিদান দিতে চান। তবে এখন থেকেই রনির দৃষ্টি বোলিং অলরাউন্ডার হওয়া। প্রয়োজনে ব্যাটিংটাও ভাল করে দেখাতে চান। জাতীয় দলের চূড়ান্ত স্কোয়াডে যুক্ত হওয়ার পর বুধবার প্রথম অনুশীলন করলেন। অনুশীলন শেষে রনিই জানালেন এমনটি। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ব্যাটিং নিয়ে কী ভাবনা? রনি বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ব্যাটিং করেছি। যুবদলেও ব্যাটিংটা করা হয়েছে। এখন জাতীয় দলেও যদি ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন হয়, তবে চেষ্টা করব ভাল কিছু করার।’ নিজেকে বোলিং অলরাউন্ডার মনে করেন কখনও? রনি সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ‘আমি চেষ্টা করি সে রকমই কিছু হতে। ব্যাটিংটা নিয়ে আরও চেষ্টা করব হয়ত। তখন কখনও হয়ত বা নিজেকে বোলিং অলরাউন্ডারই ভাবতে পারব।’ চূড়ান্ত দলে যে সুযোগ মিলবে রনির তা সবারই আগাম ধারণা ছিল। রনিরও স্বাভাবিকভাবেই তা ছিল। সুযোগ পেয়ে জানালেন, ‘খুব ভাল লাগছিল। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলব। তো প্রথমবারের মতো ১৪ জনের দলে থাকার সংবাদ পেয়ে খুবই ভাল লাগছিল। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। খুব ভাল লাগছে।’ একাদশে থাকার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? রনি তা টিম ম্যানেজমেন্টের ওপরই ছেড়ে দিলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত তো ম্যানেজমেন্ট নেবে। আমার কাজ হলো পরিশ্রম করে যাওয়া। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত সব ভাল আছে। তো চেষ্টা করব টানা পরিশ্রম করে যাব। এখন যদি ম্যানেজমেন্ট আমাকে উপযুক্ত মনে করে একাদশে রাখে, তবে নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করব।’ শুধু খেলাই নয়, স্থায়ী আসনই করে নিতে চান রনি, ‘এখান (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ) থেকে যারা ভাল করবে, তাদের নিয়েই হয়ত এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপের দল হবে। বিপিএলে খুব ভাল পারফর্ম হয়েছে। চেষ্টা করব সেটা এখানেও ধরে রাখতে। দেশের হয়ে ভাল করার জন্য চেষ্টা করব। একবার খেললে চেষ্টা করব দলে স্থান পাকা করার জন্য।’ অনেকেই প্রতিভা দেখিয়ে দলে আসে। আবার দ্রুতই বাদও পড়ে যায়। রনির কী চিন্তা? নিজেই বললেন, ‘আমার চিন্তা হলো যেভাবে পরিশ্রম করছি, সেভাবে করে যাব। বাকিটা আল্লাহর হাতে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।’ এ রকম পারফর্ম করে যেতে থাকলে তো স্থায়ীভাবে জাতীয় দলে থাকাও হবে। জাতীয় দলে খেলে অনেক বড় তারকা হওয়ার স্বপ্নও অনেকের মাঝে থাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে সবারই রূপ নেয় না। কারণ, নিজের সামর্থ্য, শক্তি, দুর্বলতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না কিংবা থাকলেও তার প্রয়োগ সঠিকভাবে করে না। কিন্তু রনি তার শক্তির জায়গাটা ভালভাবেই জানেন এবং সেই শক্তিই কাজে লাগাতে চান, ‘আমার শক্তি হলো ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বোলিং করে যেতে পারি। পেস খুব বেশি না। পেস নিয়ে আমার চিন্তাও নেই। টি২০ ক্রিকেটে পেসই একমাত্র শক্তি নয়। বোলিংয়ে বৈচিত্র্যটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আল্লাহর রহমতে আমার কিছু বৈচিত্র্য আছে। আমি চেষ্টা করব বৈচিত্র্যগুলো ধরে রাখতে।’ ব্যাটিং নিয়ে যে রনি ভাবছেন, সেই সাহস কিন্তু কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে থেকেই পেয়েছেন। রনি নিজেই যেমন বললেন, ‘কোচ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। (নুরুল হাসান) সোহান, মোসাদ্দেক (হোসেন সৈকত) এবং আমাকে কোচ বলেছেন বিপিএলে ব্যাটিংটা ভালই হয়েছে। এটা ধারাবাহিকভাবে করতে পারলে ভাল।’ বোলিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিং নিয়েও তাই ভাবতে চান রনি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ১৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন। ৪ ম্যাচে ছিলেন অপরাজিত। রান করেছেন ১২.৩০ গড়ে ১২৩। এর মধ্যে ৬৮ রানের একটি ইনিংসও রয়েছে। লিস্ট এ’তে ১১ ম্যাচের ৪টিতে ব্যাটিং করার সুযোগ পান। ১টিতে অপরাজিত থেকে মোট ২১ রান করেন। সর্বোচ্চ রান করেন ২০। আর যে বিপিএল দিয়েই মূলত রনি নামক পেসারের আবিষ্কার হয়েছে, সেই টুর্নামেন্ট দিয়েই টি২০ ক্রিকেটে পা রাখেন রনি। ১২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২টিতে ব্যাট করার সুযোগ পান। দুটি ম্যাচেই অপরাজিত থাকেন। একটিতে ১৮ ও অপরটিতে করেন ১ রান। ব্যাটিংটাও ভালই করেন রনি। আগেই জানা ছিল, রনির আদর্শ পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আমির। এবার জানা গেল, দেশের বাইরে আরেকজন ও দেশের ভেতর একজনই রনির আদর্শ ক্রিকেটার। কে কে? রনি জানালেন, ‘দেশের বাইরে আমি মোহাম্মদ আমির এবং মিচেল জনসনকে আদর্শ মনে করি। দেশে আমার আদর্শ মাশরাফি (বিন মর্তুজা) ভাই।’ আদর্শ ক্রিকেটারদের মতো বোলিংটা এখন জাতীয় দলেও দেখাতে পারলেই হয়।
×