ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

আজ ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজ ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলা ও বাঙালীর স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠান করেন। তাঁর নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝাঁক মেধাবী তরুণদের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। ৬৮ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বাঙালী জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে আজকের ছাত্রলীগের কিছু বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির ৬৮ বছরের বিশাল অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ’৫৮-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ’৬৬-এর ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক-শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দী দফা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি, ’৭০-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র উত্তোরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। তবে সংগঠনটি চলার পথ অনেক ক্ষেত্রে কুসুমাস্তীর্ণও ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সংগঠনটি বড় ধরনের ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা তৎকালীন ছাত্রলীগের বেশ ক’জন শীর্ষনেতা সংগঠন ছেড়ে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় জাসদ ছাত্রলীগ নামে আলাদা ছাত্র সংগঠনও গড়ে ওঠে, যা আজ ছাত্র রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। এরপরও কয়েক দফায় ভাঙ্গা-গড়ার কবলে পড়তে হয়েছে সংগঠনটিকে। সংগঠনের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচ দিনের বিস্তারিত কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আজ সোমবার সকাল ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সাড়ে ৬টায় ধানম-ির ৩২ নম্বরে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু হবে। এছাড়া ৮টা এক মিনিটে কার্জন হলে কেক কাটা ও মিষ্টি বিতরণ এবং সকাল ১০টায় সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে সুবিশাল র‌্যালি এবং ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ। এছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার রক্তদান কর্মসূচী, ৬ জানুয়ারি বুধবার শীতবস্ত্র বিতরণ, ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ ও পাঠচক্র এবং ৮ জানুয়ারি শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেষ হবে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী। ছাত্রলীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্নে অবদান, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে ছাত্রলীগের অর্জন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে ফুটে উঠেছে রঙিন সব দেয়াল লিখন। পাশাপাশি পোস্টার ও বিলবোর্ডও টানানো হয়েছে বিভিন্নস্থানে। ছাত্রলীগ ঘোষিত কর্মসূচী ঢাকাসহ সারাদেশের নেতাকর্মীদের জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান জনকণ্ঠকে জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করে কর্মসূচী সফল করে তুলবে।
×