ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এডিবি ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানিতে সহায়তা দেবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ নভেম্বর ২০১৫

এডিবি ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানিতে সহায়তা দেবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্যে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা (১২ কোটি মার্কিন ডলার) সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্যদিকে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি কারিগরি সহায়তা চুক্তিও হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সস্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও এডিবির পক্ষে কান্ট্রি ডাইরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ভারত থেকে নতুন করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করতে বিদ্যমান সঞ্চালন লাইন যথেষ্ট নয়। এজন্য এই লাইনের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। কারিগরি সহায়তা হিসেবে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ৮ কোটি টাকা) অনুদান ঢাকা শহরে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যয় হবে। জাপানের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পে যৌথ অর্থায়ন হিসেবে এ অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কাজুহিকো হিগুচি জানান, সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকনোমিক কো-অপারেশন (সাসেক) কর্মসূচীর আওতায় এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের অব্যাহত বিদ্যুত চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিদ্যুত বিনিময় বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে এডিবি। এ অর্থে বর্তমানে ভেড়ামারা-বহরমপুর যে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন রয়েছে সেটির ক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ভেড়ামারা ও ভারতের বহরমপুরের মধ্যে প্রথম এ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনটি স্থাপিত হয়। সে প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও সহয়তা দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। সেসময় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির সক্ষমতা ছিল। সেটি এবার বাড়িয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট আমদানির সক্ষমতা করা হচ্ছে। এর আগে এ বিষয়ে এডিবির এনার্জি ডিভিশনের দক্ষিণ এশীয় পরিচালক এ্যান্থনি জুডি বলেছিলেন,এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন ও ব্যবহারের সমন্বয় ঘটবে। তাছাড়া আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। সূত্র জানায়, শুধু বিদ্যুত আমদানিই নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও সহায়তা দিচ্ছে এডিবি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই তিন কোটি মার্কিন ডলার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশকে ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে সংযোগ এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে রেল ও সড়ক খাতের অগ্রাধিকার প্রকল্প প্রণয়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। মূলত এডিবির অর্থে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সম্ভাব্যতা যাচাই, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সহায়তা দেয়া। ওই ঋণচুক্তির আওতায় তিন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে সহায়তা, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্প প্রস্তুতিমূলক সুবিধার জন্য কারিগরি সহায়তা এবং আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতে সহযোগিতা প্রদান। প্রকল্প তিনটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্প তিনটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এডিবি সহজ শর্তে ৩ কোটি ডলার ঋণ দেবে। অবশিষ্ট ব্যয় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব খাত থেকে অর্থায়ন করা হবে। এডিবির ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সূত্র জানায়, এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এর সদস্যপদ লাভ করার পর থেকে এ সংস্থা আর্থিক সহায়তার একটি বড় অংশ বাংলাদেশকে প্রদান করছে। এডিবি এ যাবত বাংলাদেশকে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের অধিক ঋণ দিয়েছে। উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবি প্রধানত বিদ্যুত, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, পানি সম্পদ এবং সুশাসন খাতকে প্রাধান্য দেয়।
×