ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম নগরীতে ১৬৩ কিমি সড়কের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

চট্টগ্রাম নগরীতে ১৬৩ কিমি সড়কের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বর্ষার টানাবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর ১৬৩ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এখনো বেহাল অবস্থায় থেকে গেছে। তিন মাস পার হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর সংস্কার হয়নি। সংস্কার না হওয়ায় এখন নগরজুড়ে শুধু খানাখন্দ আর ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টিতে সৃষ্ট এসব গর্তের কারণে একদিকে সড়কে নিত্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে নিয়মিত চলাচল করতে গিয়ে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। নাজুক এ পরিস্থিতির কারণে কিছু কিছু সড়কে এক কিলোমিটারেরও কম সড়ক পার হতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। শুধু যে সময় অপচয় হচ্ছে তা নয়, ক্ষতবিক্ষত এ সড়ক পার হতে অসহনীয় কষ্টও সইতে হচ্ছে পথচারীদের। এ সম্পর্কে আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নগরীর সড়কগুলোর এমনই অবস্থা যে, যানবাহন চলাচল তো দূরে থাক হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়িতে গেলে ঝাঁকুনির কারণে শরীরের অবস্থা শেষ হয়ে যায়। নগরীতে এখন চলাচল করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’ নগরবাসীর ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে নগরবাসীর ভোগান্তি লাগবে তারা বর্ষার শুরুতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও ফান্ড সঙ্কটে এখন মেরামত কাজ বন্ধ রয়েছে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কাজ বন্ধ রয়েছে এমন নয়, সংস্কার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ড না থাকায় করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্কার করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়। সড়ক সংস্কারে ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। ডিসেম্বর মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’ এর আগ পর্যন্ত এ দুর্ভোগ পুরোপুরি লাঘব হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে করপোরেশন সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে করপোরেশনের উদ্যোগে জরুরী সংস্কার কাজ চলছে। সরেজমিন দেখা গেছে, টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ সড়কের কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে সংস্কারের অভাবে ছোট গর্তগুলো ততই বড় বড় গর্তে রূপ নিচ্ছে। নগরীর চকবাজার-মুরাদপুর, চকবাজার-কাপাসগোলা, চকবাজার কলেজ, চকবাজার-রাহাত্তারপুল, বক্সিরহাট-কালামিয়া বাজার, জাকির হোসেন সড়ক, ২ নম্বর গেট, টাইগারপাস সড়ক, সিটি গেট, হালিশহর সড়ক, ডিটি রোড, রামপুর ওয়ার্ড রোড, পাহাড়তলী বাজারের সামনের সড়ক, সরাইপাড়া সড়ক, নয়াবাজার ঈদগাঁ রোড, পোর্ট কানেক্টিং সড়ক, আগ্রাবাদ এক্সসেস সড়ক, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ২ নম্বর থেকে আট নম্বর সড়ক, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সংযোগ সড়ক, চান্দগাঁও মৌলভী পুকুরপাড় সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের অধিকাংশ জায়গায় মাঝখানের বিটুমিন এবং ইটের কংকর উঠে গেছে, খানাখন্দকের কারণে যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। খানাখন্দক হওয়ার ফলে রাস্তার ওপর গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে। এতে যাত্রীসহ সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৩৩টি সড়কের ১৬৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিটুমিন ও পাথর উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সিডিএ এভিনিউ সড়কে আড়াই কিলোমিটার, এসএস খালেদ রোড ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, নবাব সিরাজদ্দৌলা সড়ক এক কিলোমিটার, কোর্ট রোড ২ কিলোমিটার, জাকির হোসেন রোড দেড় কিলোমিটার, জুবিলী রোড ২ কিলোমিটার, কেসি দে রোড এক কিলোমিটার, মেহেদীবাগ রোড এক কিলোমিটার, রেবতি মোহন রোড ১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, সার্সন রোড দেড় কিলোমিটার, ওআর নিজাম রোড শূন্য দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোর্ট কানেক্টিং সড়ক, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বারিক বিল্ডিং রোড, শেখ মুজিব রোডসহ আগ্রাবাদ, হালিশহর, রামপুর উত্তর পাহাড়তলী ও পাঠানটুলি ওয়ার্ডের ১৫টি সড়কের ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৫ নম্বর মোহরা, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের ৬০টি সড়কের প্রায় ৫৩ কিলোমিটার সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিমানবন্দর সড়কের নিমতলা থেকে পুরাতন বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫০ কি.মি, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় হয়ে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬ কি.মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, পূর্ব মাদারবাড়ি, আলকরণ, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার এলাকার প্রায় ৪০ সড়কের ২১ কি.মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সড়কের ৪০ দশমিক ৭৫ কি.মি. ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন দিন এই ১৬৩ কি.মি. সড়কের ২০ কি.মি. ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছে প্রকৌশল বিভাগ।
×