ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পূজার আনন্দে সঙ্গীত তারকারা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২২ অক্টোবর ২০১৫

পূজার আনন্দে সঙ্গীত তারকারা

চন্দন সিনহা এবারের পূজায় ঢাকাতেই আছি। আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের কু-েশ্বরীতে। সেখানেই কেটেছে ছোটবেলা এবং বড়বেলার অনেকটা সময়। চট্টগ্রামে পূজার স্মৃতি আসলে ভোলা যায় না। দলবেঁধে সবাই মিলে পূজার অনুষ্ঠান করা। সেখানে একটা বড় অংশ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমরাই নেতৃত্ব দিতাম। হিন্দু মুসলিম ধর্মমত নির্বিশেষে সেখানে সবাই আসতেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি বড় উদাহরণ ছিল সেটি। এখন কাজের ব্যস্ততায় খুব একটা বাড়িতে যাওয়া হয় না পূজায়। তবে মন পড়ে থাকে সেখানে। এবারের পূজায় কম বেশি সব পূজাম-পেই ঘুরেছি। বনানী, ধানম-ি পূজাম-পে প্রায় প্রতিদিনই যাওয়া হচ্ছে সন্ধ্যার পর। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা অনেক সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে দেখে আসলে খুবই ভাল লাগছে। হাজার বছর ধরে আমরা এই অসাম্প্রদায়িকতার চর্চাই করে আসছি। গান নিয়েই পরিকল্পনা করছি। সামনের মাসে প্রবাসীদের আমন্ত্রণে কানাডার টরেন্টোতে যাচ্ছি। সেখানে প্রবাসীদের জন্য গান করব। কুমার বিশ্বজিৎ জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ তার ছোট বেলা পূজা পালনের গল্পটি শুরু করলেন ঠিক এইভাবে, ছোট বেলার পূজা নিয়ে আমার যতটুকু মনে পড়ে। তখন দেখতাম আমাদের সময় ধর্মীয়ভাবে ও বিশেষ নিয়মাবলী মেনে পূজা পালন করা হতো। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পর দেখতাম পূজার নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া হতো। পূজার সময় আমরা বিভিন্ন বাড়িতে দাওয়াত খেতাম। আমাদের একটা দোকান ছিল, মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমি দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম। আমরা পূজার সময় বিকেল বেলা সকলে মিলে ঘুড়ি উড়াতাম। হাওয়াই মিঠাই ও বাতাসা খেতে আমার খুব ভাল লাগতা। পূজার সময় প্রণামী পাওয়া যেত। এমন হতো যে, আমি জানি এখানে দশ টাকা আছে তবুও বার বার গুনতাম। বর্তমান সময়ে কিভাবে পূজাকে বরণ করে নেন, এখন আর আগের মতো পূজা পালন করা হয় না। পূজাতে অনেক সময় স্টেজ শো থাকে। পূজার ঢাক, ঢোলের আওয়াজ আপনার কেমন লাগে, পারকেশনের প্রতি আমার সব সময় দুর্বলতা বেশি। আমি বলব ঢোল ও ঢাকের আওয়াজ আমাকে যতটা আকৃষ্ট করে পৃথিবীর আর কোন বাদ্য আমাকে এতটা টানে না। আপনাদের সময়কার পূজা বরণ আর এখনকার পূজা বরণের মধ্যে কোন তফাৎ খুঁজে পান, এখনকার পূজাতে পোশাক ও সাজে পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতাম বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যেতাম। এখন এসব তেমনটা দেখা যায় না। সবাই কেমন জানি বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আসলে আমার যেটা মনে হয়, এখন ছেলেমেয়েরা সব কিছু সহজে পেয়ে যায়। কোন কিছুর ভাবনা মনে উদয় হবার আগে তারা সেটি পেয়ে যায়। আমাদের সময় এমত হতো একটা নতুন জামা দরকার লাগবে প্রথমে অনুভব করতে হতো। তারপর কাপড় কেনা । এমনও দেখা গেছে দর্জির দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম। কখন জামাটা তৈরি হবে। আসলে সহজে কোন জিনিস পেলে সেটার আবেদন তেমনটা থাকে না। তবে আমি সবাইকে বলব, বাঙালী খুব উৎসবমুখর জাতি। আমরা একট জাতি, একটা দেশ, একটা ভাষা সবাই নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে সবাই যেন এক হয়ে যেতে পারি। আমাদের সকলের মধ্যে আত্মিক বন্ধন অটুক থাকুক এটাই আমার চাওয়া। রন্টি দাশ জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রন্টি তার ছোট বেলার পূজা উদযাপনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখেছি আমাদের দেশের মানুষ অনেক উৎসবপ্রিয়। এমন হতো পূজার আগের রাতে আমাদের বাড়িতে মিটিং বসতো পূজার দিন আমরা কে কোথায় যাব, কেমন পোশাক পরব। এখন আপনি পূজাকে কিভাবে বরণ করেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন পূজায় প্রায় সময়ই দেখা যায়, আমার গানের প্রোগ্রাম থাকে। প্রোগ্রাম না থাকলে বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয়। সেখানে আমরা পূজার খাবারও খাই। পূজার শপিং নিয়ে যদি কিছু বলেন, ছোট বেলা পূজার নিজের জন্য শপিং করতাম। এখনও করি তবে ছোট বেলার মতো শপিং করা হয় না। এখন আমাকে শপিং করে দিতে হয়। পূজা নিয়ে তিনি আরও বলেন, যদিও সকলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে আমার খুব ভাল লাগে তবে ব্যস্ততার জন্য এখন আর যাওয়া হয়ে ওঠে না। আপনার কাটানো ছোট বেলার পূজা আর এখনকার পূজার মধ্যে বিশেষ কি পরিবর্তন দেখতে পান, এ বিষয়ে রন্টি দাশ বলেন, আমি আসলে খুব একটা পরিবর্তন দেখতে পাই না। তবে শহর ও গ্রামের পূজার মধ্যে বেশ তফাত রয়েছে। গ্রামে যেমন অনেক জায়গা নিয়ে ম-প করা হয়। শহরে জায়গা স্বপ্লতার জন্য তেমনটা দেখা যায় না। পূজার সময় সবাইকে বলব, পূজা উদযাপনের পাশাপাশি সবাই যেন সিডি কিনে গান শুনি। সবাই যেন আমরা আরও বেশি বেশি বাংলা গান শুনি। পূজা পূজা তার ছোট বেলার পূজা নিয়ে বলেন, ছোট বেলার পূজা আর এখনকার পূজার মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আমার কেন জানি মনে হয় এখন মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা কমে যাচ্ছে। যে যার মতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। আগে পূজায় সকলে মিলে ঘুরে বেড়াতাম এখন আর তেমন যাওয়া হয় না। কারণ এখন দেখা যায় বাইরে ঘুরতে গেলে সকলে চিনে ফেলে, কাছে এসে কথা ও ছবি তুলতে চায়। তবে এ বিষয়গুলো আমি বেশ উপভোগ করি। আমার ছোট বেলা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কেটেছে তাই দেখতাম পূজার সময় অনেক মজা হতো। ছোট বেলা নিজে নতুন জামা, জুতা আলাদা করে রাখতাম। আর যখন প্রণামী পেতাম তখন খুব ভাল লাগত। তবে আমি মনে করি আমার ছোট বেলা এখনও শেষ হয়নি কারণ আমি এখনও প্রমাণী পাই। এখন পূজায় অনেক ব্যস্ত সময় কাটে। পূজাতে বেশ কিছু স্টেজ শো করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নবমীর দিনে আমি কলাবাগান মাঠে গান গাইব। তাছাড়া পূজায় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রোগাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আমি পূজার সময়ে সকলকে বলতে চাই দূর্গা মা বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে যেন আমাদের মন থেকে হিংসা, হানাহানি দূর হয়ে যায়। আমরা যেন সকলে সুন্দর ভাবে থাকি। পূজার সময় সকলে বাংলা গান শুনুন। বাংলা গানের সঙ্গে থাকুন। কারণ আপনারা বাংলা গান শুনলে আমরা ভাল গান করার ঊৎসাহ পাব।
×