ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্ম যেন হয় ধন্য

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

জন্ম যেন হয় ধন্য

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির স্বাধিকার অর্জনের পথটি যখন সুগম হয়, তখন তিনি লিখলেন, ‘পুবের ওই আকাশে সূর্য উঠেছে আলোকে আলোকময় জয় বাংলা বাংলার জয়।’ ১৯৭১ সালে যখন উত্তাল বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পথে অগ্রসরমান তখন লিখলেন, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো, এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো।’ দুটি গান গ্রামোফোন রেকর্ড হয়ে বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই হু হু করে বিক্রি হয়ে যায়। অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান দুটো জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকেও বেজে উঠত কালজয়ী গান দুটি। যুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য লিখেছেন গান, ‘নোঙ্গর তোল তোল সময় যে হলো হলো’ গানটি আজও বাজে প্রাণের তরঙ্গে। তিনি নয়ীম গহর, ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খুব চেনা এবং প্রিয়পাত্র। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর বাঙালীবিরোধী তৎপরতার অনেক তথ্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে সরবরাহ করতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি তাঁর অবস্থান থেকে নিরলস কাজ করেছেন। চাকরি করতেন তেল কোম্পানিতে। ঢাকা করাচীর সঙ্গে তাই ছিল যোগসূত্র। সে সুবাদে তিনি অনেক তথ্য অবহিত হতেন। ষাটের দশকের শেষে তিনি বেতার-টিভির জন্যও গান লিখেছেন। তাঁর লেখা প্রায় গানই জনপ্রিয় হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণও করেছেন। তিনি একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, গায়ক, নাট্যকার ও অভিনেতা ছিলেন। বিবিসি বাংলার ভাষ্যকার ও সংবাদ পাঠক হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয় তাঁকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পদকটি পরিয়ে দিয়েছিলেন। এই নেত্রীরই সার্বিক সহযোগিতায় ২০০০ সালে তাঁর হৃৎপি-ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে সংগ্রামী ভূমিকায় থেকে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়েছেন তাঁদেরই একজন নয়ীম গহর। দেশ ও জাতির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ বলেই নিজের জীবনের দিকে কখনও তাকানোর সময় হয়ে ওঠেনি। বিত্ত-বৈভবে নিজেকে আবৃত করেননি। ছিল যা নিজের অর্থ সম্পত্তি সবই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। ৭৮ বছর বয়সে এসে এখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছেন। এ মুহূর্তে থমকে আছে তাঁর চিকিৎসা। ছয়মাস আগে ‘স্ট্রোক’ করার কারণে স্মৃতিশক্তি তাঁর লোপ পেয়েছে। নিজে চলার শক্তি যেমন হারিয়ে ফেলেছেন ঠিক তেমনি মুখ দিয়ে খাবার খাওয়ার শক্তিও নেই। চিকিৎসার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তাঁর পিঠে ঘা হয়ে গেছে। মূল কথা, প্রয়োজন তাঁর এখন উন্নত চিকিৎসার। আর এ কারণেই তাঁর পরিবার সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন। বাংলাদেশের এই খ্যাতিমান মানুষটিকে বাঁচাতে সরকারী সহযোগিতার বিকল্প নেই। যদি তাই না হয় তাহলে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানের যথার্থতা তিনি অন্তত দেখে যেতে পারবেন না। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী লাকী আকন্দও সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিদেশে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তাও দিয়েছেন। যাঁরা দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, বাঙালীর মুক্তির যুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন তাঁদের অবদান জাতি হিসেবে ভুলে গেলে চলবে না। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এই দেশ। তাদের সেই ঋণ পরিশোধ যোগ্য নয়। কিন্তু আমরা যেন তাঁদের ঋণ স্বীকার করি। নয়ীম গহরের দ্রুত আরোগ্যের পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্র এগিয়ে আসবে, তা জাতি হিসেবে সবারই কাম্য।
×