ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরিকায় ড্র টেস্টও টাইগারদের আধিপত্য

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৬ জুলাই ২০১৫

সাগরিকায় ড্র টেস্টও টাইগারদের আধিপত্য

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ক্রিকেটের বিরুদ্ধে জিতে গেল বৃষ্টি। আর ময়দানি লড়াইয়ে কোন নিষ্পত্তি দেখল না বাংলাদেশ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টানা দুই দিন বৃষ্টির আক্রমণে কোন বলই মাঠে গড়ায়নি ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিন। ফলে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র মেনে নিতে বাধ্য হলো উভয় দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিরল এক অর্জন এটি বাংলাদেশের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এর আগে খেলা আট টেস্টের কোনটিতেই বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি টাইগাররা, হেরেছে খুব বাজেভাবে। অবশেষে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে নবম টেস্টে ড্র করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ দল। ২০০২ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ দল ইস্ট লন্ডনে। তারপর থেকে চারটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এবং চারটি দেশের মাটিতে খেলে ৭ বারই ইনিংস ব্যবধানে এবং একবার ৫ উইকেটে হেরেছিল। এবার সেরা সাফল্য এলো সাগরিকায়। তবে বৃষ্টির আক্রমণ না থাকলে উভয় দলই জয়ের সম্ভাবনা ছিল বলে দাবি করেছে। ৯২ টেস্ট খেলে এখন পর্যন্ত টাইগাররা ১৪ টেস্ট ড্র এবং ৭ ম্যাচ জিতেছে। হেরেছে ৭১ টেস্ট! ১৪ ড্রয়ের মধ্যে বৃষ্টির আশীর্বাদ ছিল ৮ টেস্টেই। শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন টেস্ট ড্র করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের শুরুটা হয়েছিল বাজেভাবে। টানা দুই টি২০ হেরে গিয়েছিল টাইগাররা। পরবর্র্তীতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেরও প্রথম ম্যাচটা হেরে যায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু পরবর্তীতে টানা দুই ওয়ানডে জিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জয় করে বিরল রেকর্ড স্থাপন করে বাংলাদেশ। সেই ধারাবাহিকতা টেস্ট সিরিজে ধরে রাখার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। চট্টগ্রামের সাগরিকায় সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন পর্যন্ত এগিয়েই ছিল বাংলাদেশ। বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে এভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কব্জায় রাখাটাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এবার সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে নামতে চান তিনি। কারণ তিনি মনে করেন বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকা, তিন দিন পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এবং প্রথম দিনেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করে দেয়াটা অনেক বড় অর্জন। তাছাড়া চলতি টেস্টে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ব্যাটে-বলে প্রায় সব ক্রিকেটারই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রামে সকাল থেকেই বৃষ্টি হানা দিয়েছিল। সূর্যের মুখ দেখেনি বন্দর-নগরবাসী আগের দিনও। সেই অবস্থা থাকল প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনেও। চতুর্থ দিনে বৃষ্টি না থামায় দুপুর দেড়টায় দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিলেন আম্পায়াররা। কিন্তু পঞ্চম দিন অতটা বিলম্ব করলেন না তারা। মধ্যাহ্ন বিরতির একটু আগেই মাঠ পরিদর্শন করে জানিয়ে দিলেন আর খেলা সম্ভব হলেও সেটা সাগরিকা টেস্টে কোন ফলাফল আনার জন্য যথেষ্ট হবে না। কারণ অবিরাম বর্ষণে উইকেট থেকে কাভারই সরানো যায়নি। পরে উভয় দলই ড্র মেনে নেয়। সাগরিকা টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভার নষ্ট হওয়ার পর চতুর্থ দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। আর পঞ্চম দিনেও কোন বল মাঠে গড়ায়নি। সবমিলিয়ে ২৩০ ওভারেরই খেলা হয়নি এ টেস্টে। আড়াই দিনের টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কোন দলই মাঠে আসেনি সকালে। তবে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর উভয় দল আসে মাঠে। উভয় দল হালকা অনুশীলন করেই আবার ফিরে যায় হোটেলে। আজ ঢাকায় ফিরবে উভয় দল। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪ টেস্ট ড্র করেছে। যার মধ্যে ৮ টেস্টেই সরাসরি ভূমিকা রেখেছিল বৃষ্টি। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে কালেভদ্রে দুই-একবার ভাল খেলতে পারলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আহামরি ভাল সাফল্য দেখানোর ইতিহাস একেবারেই কম। সর্বশেষ গত মাসে সফরকারী ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টেও বড় ভূমিকা রেখেছে বৃষ্টি। বৃষ্টির দাপটে বাংলাদেশ দল প্রথমবার ড্র করেছিল ২০০১ সালে। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ততদিনে ৫ টেস্ট খেলে ফেলেছিল টাইগাররা। সেটিই ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেরা সাফল্য হিসেবে ড্র করা। এরপর অবশ্য জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আরও ২ টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের মতোই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও তিন ম্যাচ ড্র করেছে বাংলাদেশ। দুটি করে ড্র আছে শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। আর একটি করে ড্র পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এই ড্র ম্যাচগুলোর মধ্যে ১১টিই অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। চট্টগ্রাম আরেকটি ক্ষেত্রেও তাই পয়মন্ত হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য। কারণ এই সাগরিকাতেই ৫ প্রতিপক্ষ ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ড্র করতে পেরেছে টাইগাররা। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪টি এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ টেস্ট খেলে এখন পর্যন্ত কোন ড্রয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ দল।
×