ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ জুলাই ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শেষ হলো ঈদ। বিপুল আনন্দের উপলক্ষটি গত হয়েছে। তবে ঈদ যেহেতু, রেশ থেকে যায়। এখনও বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় উৎসবের আমেজ। শেষ হয়েও হয় না। শহরের যেদিকে তাকানো যায়, নতুন চেহারা। বৃষ্টিতে ধোয়া চার পাশ অপেক্ষাকৃত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ঈদ শেষেও প্রথম দেখা? সঙ্গে সঙ্গে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছেন। অহরহ চোখে পড়ছে কোলাকুলির দৃশ্য। কেমন কাটলো ঈদ? সে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। যারা গ্রামে ঈদ করেছেন, তাঁরাও ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের সরকারী ছুটি ছিল তিনদিনের। এ ছুটি শেষ হয় গত রবিবার। সোমবার সকাল থেকে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে শুরু করে মানুষ। তবে ঈদ বলে কথা, তিনদিনের ছুটিতে কি আর হয়? ছুটি বেড়ে তাই দীর্ঘ হয়েছে। কারও কারও বেলায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। লম্বা ছুটি নিয়েছিলেন যারা, তাঁরাও এখন ফিরতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম খুলনা সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে একটার পর একটা ট্রেন আসছে। ফুরফুরে মন নিয়ে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। বিকেলে সিলেট থেকে ঢাকায় পৌঁছা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী ফরিদ আহমেদ বললেন, বাড়তি ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কখন যে সময় শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না। আনন্দঘন দিন বলেই হয়ত দ্রুত চলে গেল। লোকজন ফিরতে শুরু করলেও, এখনও রাজধানী ঢাকা মোটামুটি ফাঁকা। প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। অন্তত যেমনটি দেখে ঢাকাবাসী অভ্যস্ত, সেরকম চাপ কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যাত্রী কম। পরিবহনের জটলাও নেই। হোটেল শেরাটন মোড়, বাংলামোটর মোড়, সোনারগাঁও মোড়, বিজয় সরণি মোড়Ñ কোথাও লম্বা সময়ের জন্য লাল বাতি জ্বলে থাকছে না। যানজট না থাকায় সময়টা বেশ উপভোগ করছেন রাজধানীবাসী। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন মুহূর্তেই। সাধারণ সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করতে দুই ঘণ্টা লাগত, এখন একই দূরত্ব অতিক্রম করা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে। বৃহস্পতিবার সকালে ফার্মগেটের বড় ওভার ব্রিজটির ওপরে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, অল্পস্বল্প গাড়ি। সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে। বাস থামার জায়গাটিতে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি গণপরিবহন। যাত্রীর দেখা তেমন পাচ্ছে না। এখন ট্রাফিক পুলিশের মেজাজও ঠা-া। গাড়ি হঠাৎ বেড়ে গেলে বিশেষ সেই ছড়ি হাতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াচ্ছেন। বাকি সময় ঢিলেঢালা চলে যাচ্ছে। এলিফ্যান্ট রোডে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশ বললেন, ‘গাড়ি ঘোড়া কম। একটু তো শান্তি-ই। কিন্তু ডিউটি তো ভাই করতে হয়। এইখান থেকে মাফ নাই।’ ঈদে শহর ঘুরে বেড়ানোর রীতি পুরনো। এবার সেটি সম্ভব হয়নি। বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। টানা বর্ষণে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী ঘরে বসেই মূল সময়টা পার করেছে। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর বৃষ্টি কিছুটা বিরতি দেয়। তবে বুধ ও বৃহস্পতিবার আকাশ ছিল পরিস্কার। রোদেলা। ফলে অনেকেই নতুন পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, চিড়িয়াখানাসহ সব বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় লেগে আছে। ঢাকার বিভিন্ন পথে দেখা যাচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। ঐতিহ্যবাহী টমটমে চড়ে সপরিবারে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কে চলছে রিক্সা। প্রাইভেটকারের গন্তব্য কখনও জানা। কখনও অজানা। তবে বেদম ছুটছে। ঢাকার দোকানপাট এখনও বন্ধ। বেশিরভাগই বন্ধ। বড় বড় শপিংমলগুলোকে পরিত্যক্ত বাড়ির মতো দেখাচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি কাজ শুরু হয়নি। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সরকারী ছুটি শেষে রবিবার থেকে পুরোদমে কাজকর্ম শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর তা হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পরিচিত চেহারায় ফিরবে প্রিয় শহর ঢাকা।
×