ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

একাত্তরের যুদ্ধবিমান ‘হকার হান্টার’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হস্তান্তর

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ জুলাই ২০১৫

একাত্তরের যুদ্ধবিমান ‘হকার হান্টার’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে যুদ্ধবিমান ‘হকার হান্টার’। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাদের এই বিমান দিয়ে আক্রমণ করেছিল মিত্রবাহিনী। এই বিমান দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষার সফল উড্ডয়নও হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় এই বিমানটির অংশগ্রহণ ও অবদানের জন্যই ভারতীয় বিমান বাহিনী ২০০০ সালে ‘হকার হান্টার’ বিমানটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল। কিন্তু জায়গার অভাবে সেগুনবাগিচাস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিমানটি রাখা সম্ভব হয়নি। তখন এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। প্রায় ১৫ বছর পর আগারগাঁস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনে বুধবার বিকেলে যুদ্ধবিমান ‘হকার হান্টার’ হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। আর এই হস্তান্তরের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের প্রদর্শনী। যুদ্ধবিমানটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করার এই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, ট্রাস্টি রবিউল হুসাইন, ট্রাস্টি মফিদুল হক, ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দিন বীরউত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন একরামুজ্জামান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী আব্দুল মঈন ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জিয়াউদ্দিন তারিক আলী বলেন, এটি আমাদের সবার জন্য একটি স্মরণীয় মুহূর্ত যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এই যুদ্ধ বিমানটি প্রদর্শন করতে পারছি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দিন বীরউত্তম বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠন হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান অনেক। আমি তখন সিভিলিয়ন পাইলট। খুব মনে পড়ছে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ অপারেশনের কথা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম বলেন, সিভিলিয়ন পাইলট হিসেবে যোগ দেয়ার পর প্রশিক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু অপারেশনে অংশ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের সফল অপারেশনের খবর বিবিসি থেকেও শোনানো হয়েছিল। গ্রুপ ক্যাপ্টেন একরামুজ্জামান বলেন, এই বিমানটির সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। দীর্ঘ ১৫ বছর যতেœর সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের শেষে আমরা বিমানটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করতে পেরে আনন্দিত। প্রসঙ্গত, ‘হকার হান্টার’ বিমানটি ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বিমান বাহিনীতে আকাশ রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। সেই সময়ে এটি ছিল খুবই শক্তিশালী এবং নির্ভরশীল একটি বিমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এটি ভূমি আক্রমণ ও আকাশ প্রতিরক্ষায় সফল উড্ডয়ন করে। একজন আরোহীর এই বিমানটির সামরাস্ত্র হিসেবে রয়েছে গান, রকেট, মিসাইল ও বোম। শেষ হলো জর্জ ব্রাসান্স প্রদর্শনী ॥ জর্জ ব্রাসান্স এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি ফ্রান্সের বাইরেই বেশি সমাদৃত। তিনি শুধু শ্রোতাদের শিল্পী নন, শিল্পীদেরও শিল্পী। তিনি একাধারে একজন সঙ্গীতশিল্পী, কবি ও লেখক। তাঁর কবিতা ও গান ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সাহিত্যে যেমন ছিলেন পারদর্শী তেমনি গানেও ছিলেন শ্রোতাদের মধ্যমণি। একক নৈরাজ্যবাদী এই শিল্পী কখনও সম্মিলিত সংগ্রামে অংশ নেন নাই। সব সময়ই তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। ছিলেন আদর্শবাদী সমাজের ভনিতার বিপক্ষে। পুলিশী স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও আজীবন লড়ে গেছেন। সাহিত্যে তাঁর আপন এক জগত ছিল। রাজধানীর আঁলিয়স ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে স্বল্প পরিসরে আয়োজিত এ প্রদর্শনী শুধু ফরাসী এই কবি ও সঙ্গীত শিল্পীকে ঘিরে। বুধবার শেষ হয় ২০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী। গ্যালারির চারপাশ ঘিরে ছিল ফ্রান্সের সোনালি সময়ের মানুষ জর্জ ব্রাসান্সের বিভিন্ন রকমের ছবি। কোনটাতে গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের গান শোনানোর মুহূর্ত, কোনটাতে তিনি সঙ্গীত কম্পোজ নিয়ে ব্যস্ত আবার কোনটাতে পড়ছেন নিজের লেখা কবিতা। গ্যালারির এক পাশে বৃহত আকারের টিভি পর্দায় ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে দেখানো হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পীর কণ্ঠে ফ্রান্সের ভাষায় জনপ্রিয় গান। একটি গান শেষ হলে করতালির মাধ্যমে শিল্পীকে জানানো হচ্ছে সাধুবাদ। বহুমুখী প্রতিভার আধিকারী ফরাসী এ ব্যক্তিত্বের জীবন, সাহিত্য ও সঙ্গীত নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকার আঁলিয়স ফ্রঁসেজ। ব্রাসান্স ১৯২১ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের সেটে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায়ই লেখালেখি আর সুরসংযোজনায় নিজেকে মগ্ন রাখতের এই শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে সেটে শহরে বেড়ে ওঠেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে গান ও কবিতা লেখার প্রতি ঝুকে পড়েন, পাশাপাশি নিজেকে সঙ্গীত চর্চার প্রতিও মগ্ন রাখেন। তিনি অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন যেগুলো পরবর্তীতে অনেক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৫২ থেকে ৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০টি গানের এ্যালবাম বের করেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের শুরুতে এই গুণী শিল্পী ছিলেন লাজুক, নিজের ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে আস্তে আস্তে তিনি স্বচ্ছন্দ হন। ফ্রান্সের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিটার বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। নিজের কণ্ঠের জাদু দিয়ে অসংখ্য শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। লোকজন কনসার্টে ভিড় করতে থাকল। এ্যালবামগুলোও আলোড়ন তুলছিল। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা সবাই ব্রাসেনসের ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন। এ সব নিয়েই চলছে প্রদর্শনী। ব্রাসান্সের জীবনের শেষ দিকটাও ছিল চমকপ্রদ। প্রদর্শনীর শেষ অংশেও এর ছাপ পাওয়া যায়। এটা ছিল আনন্দদায়ক ও পরস্পর সম্পর্কিত। এই পর্যায়ে এসেই ব্রাসেনসকে পুরোপুরি চেনা গেল। যে মানুষ সময়ের চেয়ে এগিয়ে। ভিন্ন তিনি বিষয়ে ও উপস্থাপনায়। এক সময় প্রশ্ন উঠেছিল, কে হতে পারবেন ব্রাসেনসের উত্তরাধিকার? এই প্রশ্নটিই প্রদর্শনীর শেষাংশ যেটা শুরু করেছেন জোয়ান সফার। তিনি জর্জ ব্রাসেনসকে নতুন করে তুলে ধরেছেন। জানা যায়, প্রদর্শনীর শব্দাবলি ব্রাসান্সের তৈরি করা সঙ্গীত থেকে নেয়া অথবা সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ। এগুলো সংগৃহীত হয়েছে বেতারের আর্কাইভ থেকে। কিছু পাওয়া গেছে তাঁর ব্যক্তিগত আর্কাইভেই। টেলিভিশন আর্কাইভ থেকে সংগৃহীত চিত্রাবলিতে আছে তাঁর প্রথম টিভি উপস্থিতি, এ্যাপস্ট্রফিজ নামের সৈনিকদের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর হঠাৎ উপস্থিতি, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জঁ ফেরাতের সঙ্গে কথোপকথন। আরও আছে ফাভিনোর ওয়ার্কশপ যেখানে ব্রাসেনসের সবগুলো গিটার তৈরি করা হয়েছিল। আছে ব্রাসেনসের আইডল টিনো রসির সঙ্গে ডুয়েট। এই অডিওভিস্যুয়াল মেটেরিয়ালগুলোর মাধ্যমে প্রদর্শনীটি পরিভ্রমণ করছে এবং একটি মাল্টিমিডিয়া মডিউল হিসেবে হচ্ছে সহজলভ্য। শিল্পকলায় শুরু হয়েছে ময়ূরভঞ্জ ছৌ নৃত্যকর্মশালা ॥ ভারতীয় আদিবাসী যুদ্ধনৃত্য ময়ূরভঞ্জ ছৌ। এ নাচের উৎপত্তিস্থল উড়িষ্যার সাবেক দেশীয় রাজ্য ময়ূরভঞ্জে। এই নাচে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন উপাখ্যান অভিনয় করে দেখানো হয়। নাচটির ওপর এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে শিল্পকলা একাডেমিতে। কর্মশালাটি পরিচালনা করছেন দিল্লীর প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী সন্তোষ নায়ার। যৌথভাবে কর্মশালাটির আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি ও বিশ্ব নৃত্যজোটের বাংলাদেশ চ্যাপটার নৃত্যযোগ। একাডেমির নৃত্যশালা মোহড়াকক্ষে বুধবার সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়।
×