ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৩৪ হাজার দক্ষ তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরি করা হচ্ছে

আউটসোর্সিংয়ে এ বছর শত কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২০ মে ২০১৫

আউটসোর্সিংয়ে এ বছর শত কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট

ফিরোজ মান্না ॥ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ বছর এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার টার্গেট নিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তার জন্য আউটসোর্সিং বিষয়ে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩৪ হাজার দক্ষ তথ্য প্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্পে ইতোমধ্যে একাধিক ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তারা আউটসোর্সিংসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক উপার্জন শুরু করেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, পাঁচটি ধাপে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ‘লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ-এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি) নামের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা অনেকদূর এগিয়ে গেছেন। তারা এখন ঘরে বসেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারছেন। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আউটসোর্সিয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে তথ্য প্রযুক্তিবিদরা এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের তরুণ তরুণীরা আউটসোর্সিং করতে পারবেন। বর্তমান বিশ্বে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং আধুনিক ও সম্মানজনক পেশার স্বীকৃতি পেয়েছে। ঘরে বসে থেকে দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাল অঙ্কের টাকা আয় করছেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইসিটিতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারত, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তরুণ তরুণীরা ব্যাপক আগ্রহের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা এখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পথ হাঁটছেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি বিশ্বাস করি দেশকে তরুণরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা এখন তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠছে। আগামী দিনে এই তরুণরাই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরোজা। এখন বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন ঘটবে। এই খাতে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬শ’ কোটি টাকা আয় হতে পারে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কর্মীদের দক্ষতা অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এ বছর ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫৪তম অবস্থানে রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া প্রকল্পটির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ৩৪ হাজার আইটি পেশাজীবীর মাধ্যমে এক লাখ ২০ হাজার তরুণ-তরুণী পরোক্ষভাবে চাকরির সুযোগ পাবেন। পাঁচটি মেয়াদে প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ৫৭২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ৫৭১ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার এবং সরকারী তহবিলের ৫১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। বিসিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। তাদের ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার কাজ করছে। সাড়ে চার হাজার বেশি ইউনিয়নে তথ্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে। আইসিটির উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এই জনবলের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন। বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ হিসাবে এখন অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে নতুন প্রজন্ম এখন এক দেশের নাগরিক নয়। তারা এখন বিশ্ব নাগরিক। বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সেক্টরে কাজ করছে। দেশেও বহু তরুণ-তরুণী বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির কাজ করে যাচ্ছেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছে সাধারণ মানুষ। এটা অত্যন্ত শুভ দিক। বর্তমান সরকার গোটা দেশকে শতভাগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ৬৪টি জেলা ও ১৯৭টি উপজেলা ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলাই ফাইবার অপটিক্যালের আওতায় আনা হবে। আমাদের তরুণ-তরুণীরা বর্তমানে এই সেক্টর থেকে প্রতিবছর ২শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব হবে। বিসিসি জানিয়েছে, দেশে তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নে অনেক মেধাবী রয়েছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সেক্টরটি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচীর কারণে সেক্টরটি অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
×