ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাল্যবিবাহ কাম্য নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৬ মে ২০১৫

বাল্যবিবাহ কাম্য নয়

বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সমাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। এমনকি এখন বাল্যবিবাহের ঝুঁকির ভেতর রয়েছে এমন অল্পবয়সী মেয়ে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সমাজে এর দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে। তারপরও দেশ থেকে এই ব্যাধি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বাল্যবিবাহ যাদের ঠেকানোর কথা, বহু এলাকায় তারাই এর মদদদাতা হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। এদের ভেতর যেমন আছেন জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, তেমনি রয়েছেন কাজী এবং আইনজীবীও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফ গত বছর মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার জরিপ প্রকাশ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী বাল্যবিবাহপ্রবণ ১০ জেলা হচ্ছে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনা। জরিপে দেখা যাচ্ছে, যেসব এলাকায় জন্মনিবন্ধনের হার কম, সেখানে বাল্যবিবাহের হার বেশি। বাল্যবিবাহপ্রবণ এলাকায় জন্মনিবন্ধনের হার ১৫ দশমিক ৯ থেকে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত। জন্মসনদ থাকলে কাজী, আইনজীবী সবাই বিয়ে পড়ানোয় দ্বিধা করেন না। সন্দেহ হলেও প্রশ্ন না তোলার প্রবণতা বেশি, যা কাক্সিক্ষত নয়। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসচেতন অভিভাবকরা। এ ধরনের সমস্যায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে হলে প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া জন্মসনদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া নোটারি পাবলিক বিয়ের হলফনামা না দিলেও বাল্যবিবাহ কমে আসবে। গত মাসে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত সেমিনারে অবশ্য জানান, নতুন আইনে নোটারি পাবলিকের কোন ভূমিকা থাকবে না। বাংলাদেশের সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের জন্য বিয়ের আইনী বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। ১৮ ও ২১ বছর বয়সের নিচে কোন মেয়ে ও ছেলেশিশুর মধ্যে বিয়ে হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবে পরিগণিত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮ বছরের নিচে কন্যাসন্তানের বেশি বিয়ে হয়, এমন ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ৬৪% শিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। মেয়েদের বিয়ের বয়স হিসেবে ১৮-কে একটা স্ট্যান্ডার্ড ধরে নেয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর বহু দেশে। যেমন ইংল্যান্ডে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮, আমেরিকায় ১৮, ফ্রান্স-জার্মানি-ইতালি-স্পেনেও ১৮। এমনকি সার্কভুক্ত দেশ ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কায় ওই ১৮-ই। লক্ষণীয় চীন-জাপানে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ২০, মালয়েশিয়ায় একুশ। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ষোলো। সমাজবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ থেকে বলা যায় বাল্যবিবাহ কোন পৃথক সমস্যা নয়। একে দেখতে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য সব সামাজিক সমস্যার অংশ হিসেবে। দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন, পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্ট সামাজিক ব্যাধি, নারী পাচার, মাদক ব্যবসা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এসবই দায়ী এর জন্য। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে কেবল বাল্যবিবাহ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবে গ্রামবাংলায় মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাল্যবিবাহের হার কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়। এজন্য সামাজিক সচেতনতা জরুরী।
×