ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন সিটিতে ৪২ মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াফত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

তিন সিটিতে ৪২ মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াফত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত তিন সিটি (ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ছাড়া অন্যরা অনেক হাঁকডাক দিয়ে নির্বাচনে এলেও জামানত ফিরে পাচ্ছে না কেউ। মাহী বি চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি, গোলাম মাওলা রনি, নাদের চৌধুরীসহ তিন সিটি কর্পোরেশনে ৪২ জন মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে। এই তিন সিটি কর্পোরেশনে মোট ৪৮ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ও বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়ালসহ ১৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ও বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাসসহ ২০ জন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত মোহাম্মদ মনজুর আলমসহ ১২ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মোঃ সামসুল আলম জানান, যেসব প্রার্থী আইনে থাকা নির্দিষ্টসংখ্যক ভোট না পাবেন তাদের জামানত বাজেয়াফত হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন বিধিমালায় নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালার বিধি ৪৪’র উপবিধি ৩ অনুযায়ী, ‘ভোটগ্রহণ বা ভোটশেষ হওয়ার পর যদি দেখা যায়- কোন প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ অপেক্ষা কম ভোট পেয়েছেন, তাহলে তার জামানতের টাকা সরকারের অনুকূলে বাজেয়াফত হবে’। সিটি নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, কোন সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২০ লাখের কম হলে মেয়র প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখের বেশি ভোটার হলে ১ লাখ টাকা জামানত দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটির প্রার্থীদের ১ লাখ টাকা করে এবং ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটির প্রার্থীদের ৫০ হাজার টাকা করে বাজেয়াফত হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে যাদের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৫৭টি ভোট। ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আনিসুল হক ও তাবিথ আউয়াল ছাড়া কোন প্রার্থীই ২০ হাজারের বেশি ভোট পায়নি। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, ডিএনসিসির ১৬ প্রার্থীর মধ্যে ১৪ প্রার্থীই তাদের জামানত হারাচ্ছেন। এরা হলেন- আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, কাজী মোঃ শহীদুল্লাহ, চৌধুরী ইরান আসাদ সিদ্দিকী, নাদের চৌধুরী, বাহাউদ্দিন আহমেদ সরকার, মাহী বি. চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মোঃ আনিসুজ্জামান খোকন, মোঃ জামান ভূঁইয়া, মোঃ জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকি, মোঃ শামসুল আলম চৌধুরী, ফজলে বারী মাসউদ ও শেখ শহিদুজ্জামান। এরমধ্যে তাদের ভোট সংখ্যা- মাহী বি. চৌধুরী (ঈগল) ১৩৪০৭, জোনায়েদ সাকি (টেলিস্কোপ) ৭৩৭০, ক্বাফি (হাতি) ২৪৭৫, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল (চরকা) ২৯৫০, নাদের চৌধুরী (ময়ূর) ১৪১২, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (ক্রিকেট ব্যাট) ১২১৬, কাজী মোঃ শহীদুল্লাহ (ইলিশ) ২৯৬৮, শেখ মোঃ ফজলে বারী মাসউদ (কমলা লেবু) ১৮০৫০, শামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ) ৯৮২, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাক্স) ১০৯৫, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী (লাউ) ৯১৫, মোঃ আনিসুজ্জামান খোকন (ডিশ এন্টেনা) ৯০০, মোঃ জামান ভূঞা (টেবিল) ১১৪০, শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই) ৯২৩ ভোট পেয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে যাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি (ডিএসসিসি) নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৯ লাখ ৫ হাজার ৪৮৪টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৮৫ ভোট। কিন্তু দক্ষিণে মেয়র প্রদে ২০ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে সাঈদ খোকন ও মির্জা আব্বাস ও ছাড়া কোন প্রার্থীই লাখের ঘর অতিক্রম করতে পারেননি। ফলে বাকি ১৮ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে। তারা হলেন- আবদুর রহমান, এ এস এম আকরাম, আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আয়ুব হোসেন, এস এম আসাদুজ্জামান রিপন, দিলীপ ভদ্র, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মশিউর রহমান, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী, হাজী মোঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, মোঃ আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মোঃ আবদুল খালেক, মোঃ গোলাম মাওলা রনি, মোঃ জাহিদুর রহমান, মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার, মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, মোঃ শহীদুল ইসলাম ও শাহীন খান। দক্ষিণে প্রার্থীদের ভোট সংখ্যা- ফ্লাক্স প্রতীকে আব্দুর রহমান ১৪,৭৮৪ ভোট, সোফা প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন মিলন ৪৫১৯ ভোট, চরকা প্রতীকে আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন ২,১৯৭ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে রেজাউল করিম চৌধুরী ২,১৭৩ ভোট, জাহাজ প্রতীকে শাহীন খান ২,০৭৪ ভোট, আংটি প্রতীকে গোলাম মওলা রনি ১,৮৮৭ ভোট, বাস প্রতীকে শহীদুল ইসলাম ১,২৩৯ ভোট ও টেবিল প্রতীকে সিপিবি-বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ ১,০২৯ ভোট পেয়েছেন। ল্যাপটপ প্রতীকে জাহিদুর রহমান ৯৮৮ ভোট, কমলা লেবু প্রতীকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন ৯২৮ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে এ এস এম আকরাম ৬৮২ ভোট, হাতি প্রতীকে দিলীপ ভদ্র ৬৬৯ ভোট, কেক প্রতীকে আব্দুল খালেক ৫৫০ ভোট, ময়ূর প্রতীকে শফিউল্লাহ চৌধুরী ৫১২ ভোট, চিতাবাঘ প্রতীকে মশিউর রহমান ৫০৮, লাউ প্রতীকে মোঃ আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ৩৬২ ভোট, ঈগল প্রতীকে আয়ুব হোসেন ৩৫৪ ভোট এবং শার্ট প্রতীকে বাহরানে সুলতান বাহার ৩১৩ ভোট পেয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটিতে জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে যাদের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩টি। এর এক অষ্টমাংশ হচ্ছে ১ লাখ ৮ হাজার ৫৮৩ ভোট। কিন্তু এ নির্বাচনে আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ মনজুর আলম ছাড়া বাকি ১০ প্রার্থীর কোন প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশ ভোট পাননি। ফলে তাদেরও জামানত বাজেয়াফত হচ্ছে। এরা হলেন- আরিফ মইনুদ্দীন, এম এ মতিন, শফিউল আলম, মোঃ আবুল কালাম আজাদ, মোঃ আলাউদ্দিন চৌধুরী, মোঃ ওয়াজেদ হোসেন ভূইয়া, মোঃ সোলায়মান আলম শেঠ, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, সাজ্জাদ জোহা ও হোসাইন মোঃ মুজিবুল হক। চট্টগ্রামে আ. জ. ম নাসির এবং মনজুরের বাইরে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে চরকা প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন ১১,৬৫৫ ভোট, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া ৯,৬৬৮ ভোট, ডিশ এ্যান্টেনা প্রতীকে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ ৬,১৩১ ভোট, ময়ূর প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক শুক্কুর ৪,২১৫ ভোট, ফ্লাক্স প্রতীকে সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি ২,৬৬১ ভোট এবং টেলিস্কোপ প্রতীকে গাজী মোঃ আলাউদ্দিন ২,১৪৯ ভোট পেয়েছেন। বাস প্রতীকে বিএনএফের আরিফ মঈনুদ্দিন ১,৭৭৪ ভোট, দিয়াশলাই প্রতীকে আবুল কালাম আজাদ ১,৩৮৫ ভোট, ক্রিকেট ব্যাট প্রতীকে সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা ৮৪৫ এবং মাছ প্রতীকে শফিউল আলম ইলিশ ৬৮০ ভোট পেয়েছেন।
×