ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পাঙ্গনে সামির প্রকৃতি নির্ভর চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

শিল্পাঙ্গনে সামির প্রকৃতি নির্ভর চিত্র প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতি অনুরাগী এক চিত্রশিল্পী ওয়ারিওর রহমান সামি। রং আর রেখায় ছুঁয়ে যান নিসর্গের রূপময়তাকে। প্রকৃতির ভেতরে কথা যেন মেলে ধরেন আপন ক্যানভাসে। শনিবার থেকে ধানম-ির শিল্পাঙ্গন গ্যালারিতে শুরু হলো চীনপ্রবাসী এই শিল্পীর চিত্রকলা প্রদর্শনী। প্রকৃতিকে উপজীব্য করে আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ভয়েস অব নেচার’। শীতের বিকেলে বসে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। সভাপতিত্বের পাশাপাশি প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন চিত্রসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। সামির শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে আলোচনা করেন শিল্পী রশীদ আমিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি ও চিত্রসমালোচক মুস্তফা খালিদ পলাশ। মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, জলরং অনেকটা প্রেমিকার মতো। কেবলই নিত্য পরিবর্তনশীল। জলের কাছেই সমর্পণ করতে হয়। মূলত আত্মার নানা পর্দাকে দেখতে হলে এবং আত্মার সংবেদী অনুরণন শুনতে চাইলে জল রঙের কাছেই যেতে হবে। তাই দৃষ্টিনন্দন শাশ্বতকে ধরতে হবে জলরঙেই। মোস্তফা খালিদ বলেন, নবীন হলেও সামির কাজে পরিপক্কতা আছে। তিনি প্রথাগত জল রঙকে জল হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছেন। রশীদ আমিন বলেন, আমাদের দেশের নিসর্গের একটা কাব্যিক ভাষা আছে। সামি জল রঙের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির ভাষাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। জলরঙের আশ্রয়ে প্রকৃতিনির্ভর ছবিগুলো এঁকেছেন সামি। একই সঙ্গে চিত্রপটে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের নিসর্গের দৃশ্যকাব্য। প্রচ- ঝড়ের মাঝে এগিয়ে চলা রিকশার ছবিটি যেন বলে যায় নিসর্গনির্ভর জীবন বাস্তবতার কথা। বৃষ্টির পর ডানা ঝাপটানো হাঁসের ঝাঁকের চিত্রকর্মটি এককথায় দারুণ নান্দনিক। আছে চীনের বিখ্যাত ওয়েস্ট লেকের ছবি। উপস্থাপিত হয়েছে শরতের কাশফুলের নয়নজুড়ানো চিত্রকর্ম। আছে শ্রাবণের বারিধারায় টইটম্বুর হওয়া নদীর দৃশ্যকল্প। ফেরা সিরিজের তিনটি ছবির মধ্যে একটিতে উঠে এসেছে গোধূলিলগ্ন। সাঁজবেলায় ঘরে ফিরে মা ও মেয়ে। সব মিলিয়ে ৩৮টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। দশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীতের ধ্বনিমুদ্রিকার প্রকাশনা ॥ শুদ্ধসঙ্গীত সাধনার পরিচয় তুলে ধরতে ধ্বনিমুদ্রিকা প্রকাশ করল ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। তিন প্রহরের রাগ শীর্ষক এ্যালবামটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শনিবার বিকেলে। ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃৃতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। স্বাগত কথনের পাশাপাশি উদ্বোধক শ্রী অমরেশ রায় চৌধুরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। অনুষ্ঠানে বেহালা বাজিয়ে শোনান শিউল ভট্টাচার্য। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন। প্রসঙ্গত, প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের সংস্কৃৃতিতে একটি দিন আটটি ভাগে ভাগ করা হয়ে আসছে। প্রহর নামে চিহ্নিত করা হয়েছে তিন ঘণ্টার প্রতিটি ভাগকে। গানের মেজাজ অনুযায়ী সঙ্গীতগুরুরা বিভিন্ন পরিবেশ-প্রতিবেশের উপযোগী করে দেখে আসছেন প্রতিটি রাগকে। প্রহর অনুযায়ী হয়েছে রাগবিন্যাস। তিন প্রহরের রাগ ধ্বনিমুদ্রিকায় উপস্থাপিত হয়েছে দ্বিতীয় প্রহরে পরিবেশনযোগ্য শান্ত-সুন্দর প্রকৃতির রাগ গুর্জরী, টোড়ি, দিবা অন্তিম প্রহরের আবেগঘন ভালবাসাম-িত নান্দনিক রাগ মধুবন্তী এবং রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের শ্রুতিমধুর বহু প্রচলিত বেহাগ। নোমান রশীদের ছয় গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ সূচীপত্র প্রকাশনীর আয়োজনে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হলো কবি ও গবেষক নোমান রশীদের ৬টি প্রন্থের প্রকাশনা উৎসব। ‘অঞ্জলি লহ মোর’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সূচীপত্রের প্রধান নির্বাহী সাঈদ বারী, সাহিত্য-সমালোচক ড. ফজলুল হক সৈকত। লেখক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। তার কাব্যগ্রন্থÑ রাতদুপুরে আমার স্বদেশ, স্তনাগ্রচূড়ায় ধবল দ্যুতি, ঢেকে দেবো কোমলতা দেহলতা, আঙুলে আমার গোলাপ ফোটে; লিরিক-এ্যালবাম রাত্রি তুমি জেগে থাকো চন্দ্রপ্রহরে এবং কবিতা-বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ কবিতা কোন্দল ও মীমাংসার মোড়ন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা-ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও কবি নোমান রশীদ যে সৃজনশীলতা এবং গবেষক নোমান রশীদ যে মননশীলতার প্রমাণ রেখেছেন তা আমাদের শিক্ষক সমাজের জন্য প্রেরণার বিষয়। বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে আরও বেশি শিক্ষা-জ্ঞান ও গবেষণামুখী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। নোমান রশীদের বাবা-মায়ের প্রেরণা ও উৎসাহের কথা স্মরণ করে মন্ত্রী সকল পিতা-মাতাকে সন্তানের আগ্রহের বিষয় এবং ক্রিয়েটিভিটির দিকে নজর দেয়ার অনুরোধ জানান। ড. হারুন অর রশিদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সঙ্গে কবি ও গবেষক নোমান রশীদের সম্পর্ক খুব নিবিড়। তিনি রাজনীতি সচেতন লেখক। স্বাদেশিকতার চেতনায় নোমান রশীদের কবিতা ও সাহিত্য-সমালোচনা সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, নোমান রশীদের কবিতার বিষয়-ভাবনা ও পরিবেশনশৈলী চমৎকার। এই ৫টি কবিতাগ্রন্থ বাংলা কবিতায় নোমান রশীদের স্থান নির্দিষ্ট করে দিল। প্রাবন্ধিক নোমান রশীদের পর্যবেক্ষণ এবং সমালোচনার পদ্ধতি ও ধারা মৌলিক। কবিতার পাঠক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষকের জন্য বইটি গুরুপূর্ণ বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে নোমান রশীদ বলেন, কবিতার গীতলতা এবং কাঠামো-ভাবনা আমাকে নিরন্তর তাগাদা দেয়। নিজের কল্পনা ও চিন্তাগুলো প্রকাশ করেছি ওই তাগিদ আর দায়বোধ থেকে। আমার বাবার অসীম প্রেরণা আর সহযোগিতায় লেখক হতে পেরেছি। আত্মীয়-পরিজন আর শুভাকাক্সক্ষীদের কথাও স্মরণ করছি এই প্রসঙ্গে।
×