
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন কুয়াকাটায় ভয়াবহ জীর্ণদশার ডাকবাংলো কাম বহুতল সাইক্লোন শেল্টার ভবনটি আগামি ১৫ দিনের মধ্যে অপসারণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) ইয়াসীন সাদেক পৌরসভা মিলনায়তনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, গণমাধ্যম কর্মী, সচেতন নাগরিক, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের এমন আশ্বাস দিয়েছেন। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের এমন সিদ্ধান্তের বিষয় টি তিনি নিশ্চিত করেন। কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, জেলা প্রশাসনের এমন নেওয়ায় তারা ধন্যবাদ জানান। দীর্ঘদিনেও জীর্ণদশার এই ভবনটি অপসারণ না করায় কুয়াকাটা বয়েজক্লাবসহ সচেতন সমাজ সংগঠকরা আজ মানববন্ধন সমাবেশের ঘোষণা দেন। যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ও এলজিইডি এমন উদ্যোগ নেয়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন লাগোয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, আট বছর আগে এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অপসারণ করা হয়নি। বহুতল এ ভবনটির মূল পিলারে এক যুগ আগেই ফাটল ধরেছে। পিলারের রড বেরিয়ে গেছে। জং ধরে গেছে। প্রতিনিয়ত পিলার ও ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। ভবনটির পাশ দিয়ে সড়কে ভারি যাবাহন চলাচলে ভবনটিতে ঝাকুনি খায়। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাংলো কাম সাইক্লোন শেল্টারটি ধসে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। এ ভবনটির পাশেই লতচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। ফলে শত শত শিশুদের চলাচলে চরম ঝুঁকি রয়েছে। জীর্ণদশার তিনতলা এই ভবনটি পর্যটকসহ প্রাইমারি স্কুলের শিশুদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভবনটি অপসারণ করার দীর্ঘ দিনের দাবি শিশু শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষকসহ স্থানীয়দের। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছিলেন উদাসীন। তারা চরম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি অপসারণের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় মানববন্ধন সমাবেশের ডাক দেন । ভবনের সামনে সড়কে কুয়াকাটা বয়েজ ক্লাব এ সামাজিক কর্মসূচি ঘোষণা করে।
কুয়াকাটার কেরানিপাড়ার বাসীন্দা রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সভাপতি এমং তালুকদার জানান, তার বাবা প্রয়াত বাচিং তালুকদারের দান করা জমিতে ওই সময় সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাইমারি স্কুল করা হয়। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত-৭৪-৭৫ সালের দিকে এই ভবনটি নির্মাণ করে সাইক্লোন শেল্টার ও প্রাইমারি স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।’ পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এটিকে ডাক বাংলোতে পরিণত করে। এভবনটি ঘেষে পূর্বদিকে প্রাইমারি স্কুলের একতলা ভবন রয়েছে। রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার মাঠ ও চলাচলের সড়ক। ফলে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পর্যটকসহ স্কুলে আসা শিশুরা ধসে পড়া পলেস্তরার আঘাতে গুরুতর জখম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কোমলমতি শিশুরা জানায়, তারা ঝুকিপূর্ণ এ ভবনটির পাশেই মাঠে এখন আর কেউ খেলাধুলা করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত ভবনের পলেস্তরা ধসে পড়ছে। আহত হওয়ার ভয়ে থাকছে সবাই। ভবনটি অপসারণ করার দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল শিশুদের। শিক্ষকসহ অভিভাবকরাও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে আসছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, এই স্কুলের দুইদিকে ঘেরা ঝুকিপূর্ণ ভবনে ডাকবাংলোটি। ৭-৮ বছর ধরে ভবনটির ভগ্নদশা। তাই সবসময় ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে সারাক্ষণ ভয়ে থাকতে হয়। তারা শিশুদের সতর্ক করেছেন। এমনকি ভবন লাগোয়া খেলার মাঠটি পর্যন্ত শিশুরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারছে না। বড় ধনের দূর্ঘটনা এড়াতে জীর্ণদশার ভবনটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন । বহুবার বিষয়টি এলজিইডিকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেক জানান, আগামি ১৫ দিনের মধ্যে এই ভবনটি অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিষয় টি কুয়াকাটার সুধী সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সম্মানিত নাগরিকদের অবহিত করা হয়েছে।
আঁখি