ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁই  চায় শহীদ নাজমুলের মা

রাহুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৫ জুলাই ২০২৫

সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁই  চায় শহীদ নাজমুলের মা

জুলাই আন্দোলনে শহীদের পরিবার অন্যের জমিতে বসবাস করছে

ভূমিহীন ও অতিদরিদ্র পরিবারের যুবক নাজমুল হাসান (২৩)। বসবাস দাদির ভিটায়। বাবাকে হারিয়ে হাল ধরেন সংসারের। জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক শ্রমিকের। এখান থেকে স্বপ্ন দেখছিলেন কয়েক শতক বসতভিটা কেনার। যেখানে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবেন মা গোলেভান বেওয়াকে নিয়ে।
এরই মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ যখন উত্তাল তখন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার হঠানোর জন্য  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাজমুল হাসান। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি শহীদ হন। তার জীবনের মায়া ত্যাগে দেশে শান্তি বয়ে আসলেও আজও কান্না থামেনি নাজমুলের মায়ের। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। এখনো অন্যের জমিতে কোনোমতে বসবাস করছেন শহীদের পরিবার। এখন রাষ্ট্রীয় বা কোনো দানশীল ব্যক্তির কাছে একটি বসতভিটার আকুতি জানিয়েছেন শহীদ নাজমুলের মা গোলেভান বেওয়া।
সম্প্রতি সরেজমিনে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়- ছেলেকে হারানোর শোক আর মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চিন্তায় যেন আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে গোলেভানের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অতিদরিদ্র পরিবারের একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান। তার রিক্সাচালক বাবা হাইদুল ইসলাম প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে মা গোলেভান বেওয়া আর ছোট দুই বোন-হিরা মনি ও আয়শা খাতুনকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন নাজমুল। জীবিকার তাগিদে ঢাকার আশুলিয়া এলাকার সিয়াম গার্মেন্টসে চাকরি করছিলেন। সারাদেশ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল, তখন নাজমুল হাসানও এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গত বছরের ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন। সেই গুলি ঢোকে তার পেটের ডান পাশে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় মারা যায় নাজমুল। এরপর ধারদেনা করে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে ১০ আগস্ট সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে সেই কবর থেকে শহীদ নাজমুলের লাশ উত্তোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয় প্রশাসন। এ সময় স্থানীয়দের বাধার মুখে লাশ তুলতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন।
শহীদ নাজমুল হাসানের বোনজামাই আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে ভাইটির মৃত্যুর পর শাশুড়ি তার অস্থায়ী বাড়িতে একা হয়ে পড়েন। তাকে কিছুটা সহযোগিতা করতে তখন থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করছি।
শহীদ নাজমুল হাসানের মা গোলেভান বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। নেই বসতভিটা। দাদি শাশুড়ি রাহেলা বেওয়ার জায়গায় টিনশেড ঘর তুলে বসবাস করছি। স্বামী অনেকদিন আগে মারা গেছেন। আমাদের একটাই ছেলে নাজমুল। বিয়ে না করে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে আমাকে দেখাশোনা করছিল। এরপর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে। 
গোলেভান বেগম আরও বলেন, নাজমুল শহীদ হওয়ার পর প্রথমে বিএনপির নেতারা ২৫ হাজার এরপর জামায়াত নেতারা ২ লাখ টাকা এবং এনসিপির নেতারা একটা বাটন মোবাইল ফোন দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে আরও ৭ লাখ টাকাও পাওয়া গেছে। এসব টাকার মধ্যে থেকে সেই সময়ে গুলিবিদ্ধ ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টায় ঋণ হওয়া ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নেওয়া হয়। শুনেছিলাম সরকার নাকি শহীদদের জন্য মাসিক ভাতা দিবে। তা কখন থেকে পাব জানি না। সেই সঙ্গে আমার একটি বিধবা ভাতাও দাবি করছি। এ ছাড়া কেউ সাহায্য করলে ৫ শতক জমি কিনে বাড়ি করতাম।
গাইবান্ধা জুলাই যোদ্ধা-২৪ সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের শহীদ নাজমুল হাসানের পরিবারকে সহযোগিতা করাসহ খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমরা সব যোদ্ধাদের পাশে আছি।

প্যানেল

×