ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে গিয়ে সড়কে প্রাণ ঝরলো একই পরিবারের ৭ জনের

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৩ জুলাই ২০২৫

অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে গিয়ে সড়কে প্রাণ ঝরলো একই পরিবারের ৭ জনের

ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের বড়াইগ্রামে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাতজনসহ মোট আটজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আড়াইমারি এলাকায় মাইক্রোবাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ধর্মদহ এলাকার জাহিদুল ইসলাম, তার স্ত্রী সেলি খাতুন, সেলির বোন আঞ্জুমানারা আন্নি খাতুন এবং তাদের আরও তিনজন আত্মীয়। মাইক্রোবাসে থাকা সকল যাত্রীই প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

 

পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য ছিল সিরাজগঞ্জে থাকা একজন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাওয়া। ভোরে কুষ্টিয়া থেকে একটি মাইক্রোবাসযোগে তারা রওনা দেন। সকাল আটটার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রামের আড়াইমারি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া ট্রাক হঠাৎ লেন পরিবর্তন করে মাইক্রোবাসের ওপর ধেয়ে আসে।

সরাসরি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান পাঁচজন। আহত অবস্থায় বাকিদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চালকসহ আরও তিনজন।

 

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্বজনরা। চোখের সামনে মরদেহ দেখেও বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ। একজন স্বজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “চরম নির্মম একটা এক্সিডেন্টে আমার পরিবারের সকলেই মারা গেছে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, যেন তাদের আত্মার শান্তি হয়।”

 

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকটি নিজের লেন ছেড়ে উল্টো লেনে উঠে আসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নাটোর হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মনে হয়েছে, ট্রাকটি রং লেন পরিবর্তন করেই মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটায়।”

দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায় চালক ও তার সহকারী। তাদের শনাক্ত ও আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

দুর্ঘটনাস্থল বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত একটি রুট হলেও এটি এখনও দুই লেনের, যার ফলে বারবার ঘটছে বড় দুর্ঘটনা। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ফোর লেন করলে দুর্ঘটনা কমবে। এর আগেও একবারে ২৯ জন মারা গেছে, পরে ছয়জন। এখন আবার একসঙ্গে আটজন। এই মহাসড়কে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও প্রাণহানি হবে।”

 

পুলিশ জানিয়েছে, অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ট্রাকের মালিক ও চালকের খোঁজ চলছে। এদিকে, এলাকাবাসী বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।

 

একটি অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে বেরিয়ে পরিবারটির সকলেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। নাটোরের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল দেশের মহাসড়কে কী ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যেই যাত্রা করতে হয় সাধারণ মানুষকে। তদন্ত ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এখনই প্রয়োজন দ্রুত মহাসড়কগুলোর আধুনিকীকরণ ও নিরাপত্তা জোরদার।
 

ছামিয়া

×