
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দুইবার বিস্ফোরণ হয়। এরপর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ দগ্ধ হন অনেকেই।
মঙ্গলবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেভাবে যুদ্ধবিমান রাউন্ড দেয়, সোমবারও বিমানটি ঠিক সেভাবে রাউন্ড নেয়, টার্ন করে। আমার কাছে মনে হয়েছিল, পাইলট ঢাকার বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
ঘটনার সময় স্কুলেই ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ। সে সময়ের দৃশ্য বর্ণনা করেন এভাবে- বিমান যখন পড়ে যায় তখন দুইবার বিস্ফোরণ হয়। প্রথম বিস্ফোরণে হালকা আওয়াজ হয়, তখন আগুন ছিল পেছনের অংশে। ৬-৭ সেকেন্ড পর দ্বিতীয়বার যখন আবার বিস্ফোরণ হয় তখন বিকট শব্দ হয়। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। পাশেই আবার দেড়টার দিকে স্কুলের বাস ছাড়ার কথা। সেই বাস থেকে একজন বের হয়ে বললো, স্যার আমাদের বাঁচান। ওয়ালিউল্লাহ আরও বলেন, আমাদের স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে ১০ হাজারের ওপর শিক্ষার্থী। স্কুল সেকশনে শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৮০০ জন। যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয় সেখানে প্রায় ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশিক্ষণ বিমানটি যখন মাইলস্টোনের স্কুল শাখার হায়দার আলী অ্যাকাডেমিক ভবনে আছড়ে পড়ে, তখন ভবনে ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকলেও ঘটনার সময় কতজন শিক্ষার্থী ছিল- সে তথ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এ নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছে না।
ওই স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ওই ভবনে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো। ওই সময় দ্বিতীয় শিফটে অনেক শ্রেণির ক্লাস শেষ হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবকরা নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল, কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একসঙ্গে ছিলেন। অনেকে আবার তখনও শ্রেণিকক্ষে ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের জনসংযোগ কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, অনেক গণমাধ্যমে কোচিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন এমন বলা হলেও সেটি সঠিক নয়। স্কুল ছুটির সময় ছিল ১টা ৩০ মিনিট। তবে অনেক ক্লাসের শিক্ষকরা একটু আগেই ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে যান। সেসব ক্লাসের শিশুরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। আর কিছু ক্লাসে শিক্ষার্থীরা ভেতরে ছিল।
জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, যেখানে বিমানটি পড়ে সেখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসরুম। দুটি ক্লাসে কমপক্ষে ৩০ জন করে ৬০ জন শিক্ষার্থী ছিল। তার মধ্যে অল্প কয়েকজন হয়তো বাইরেও ছিল। তবে ওই ভবনে কতসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্লাস করে এ ব্যাপারে ‘সুনির্দিষ্ট’ তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমাদের কাছে স্কুলের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা থাকে। ক্লাস ধরে ধরে তথ্য আমরা পাইনি। ঘটনার পর আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা (মাইলস্টোন) কোনো সাড়া দেয়নি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
প্যানেল মজি