
শামীম আখতার হেনু, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং নিবেদিতপ্রাণ একজন কবি। সপ্তম শ্রেণী থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। তার কবিতা নিছক ছন্দ আর শব্দের খেলা নয়। সেগুলো জীবনের অভিজ্ঞতা, আত্মার আর্তনাদ ও হৃদয়ের ভাঙাগড়ার সাক্ষী। নিজ ভাষায় তিনি বলেন, “মনের ভাঙা-গড়ার রক্তঝরা সাক্ষ্য আমার কবিতা।”
জীবনের নানা পর্বে তিনি লিখেছেন হাজারেরও বেশি কবিতা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য। আজও তাঁর নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়নি। এত সৃষ্টিশীলতার পরও কোনো প্রকাশক, কোনো সংগঠন বা পাঠকের সম্মিলিত উদ্যোগে তাঁর একটি কবিতার বইও আলোর মুখ দেখেনি।
শামীম আখতার হেনুর জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার চোপড়া থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হলেও তাঁর পিতা মো. বজলার রহমান পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং দিনাজপুর জেলার আটোয়ারী থানার বর্ষালুপাড়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
শিক্ষক ও কবি হেনুর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ কেটেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। এসএসসি পাশ করেন রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে, এইচএসসি ঠাকুরগাঁও বিডি কলেজ থেকে এবং বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। পরে শিক্ষকতা শুরু করেন নিজেরই প্রিয় স্কুল রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৩৫ বছর ধরে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি অবসর নেন।
ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, সৎ, শৃঙ্খলাপ্রিয় এবং সংস্কৃতিমনস্ক। কিন্তু আজ, জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না, শ্রবণশক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর স্ত্রীও অসুস্থ। জীবনের এই সন্ধিক্ষণে তারা দুজনেই চলেছেন নিঃশব্দ, নিঃস্ব সংগ্রামের পথে।
রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবু শাহিন বলেন, “হেনু স্যার নিভৃতে থেকেও আলোক ছড়িয়েছেন শত শত শিক্ষার্থীর হৃদয়ে। অথচ সমাজ তাঁর জন্য একটি বইও প্রকাশ করতে পারল না। এটা আমাদের ব্যর্থতা।”
কবি-শিক্ষক শামীম আখতার হেনু নিজেই বলেন, যে ব্যথা ব্যক্ত করা যায় না, যদি ওই ব্যথা তোমাকে আহত করে। তখন নীরবে বসে অতীতের স্মৃতি, যা ঘটে গেছে। ওইগুলো মনে মনে চিন্তা করলে, আরাম পাবে, স্বস্তি পাবে, দুঃখ ঘুচে যাবে।
রাজু