ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

এক মায়ের হৃদয়বিদারক বর্ণনা

পাশেই বাচ্চাগুলা খেলছিল, মুহূর্তেই খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২২ জুলাই ২০২৫

পাশেই বাচ্চাগুলা খেলছিল, মুহূর্তেই খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল

রাজধানীর একটি স্কুলের পাশেই ঘটে গেল বিভীষিকাময় এক বিমান দুর্ঘটনা। একটি প্রশিক্ষণ বিমান জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয়ে আগুনের গোলায় পরিণত হয়। মুহূর্তেই দগ্ধ হয় স্কুলের শিশুরা, ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে নিষ্পাপ প্রাণ। ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, আহতদের আর্তনাদ এবং স্বজনদের খোঁজাখুঁজির হৃদয়বিদারক দৃশ্য যেন দ্বিতীয়বার হিরোশিমা।

একজন আহত মা জানালেন, “আমি জাস্ট পড়ে গেছি। আমি কিভাবে পড়ে গেছি আমি জানিনা। আমি ভাবছিলাম আমার পিছনে পুরা আগুন ধরে গেছে। তারপর আমি খুজতেছিলাম আমার বাচ্চা, আমার স্বামী ওদেরকে। এরপর আমার হাজবেন্ড দৌড়ে এসে আমাকে তুলেছে। পাশেই বাচ্চাগুলা খেলছিল। একটা বাচ্চা পুরোপুরি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “পিছনে তাকিয়ে দেখি দোলনায় থাকা চারটা বাচ্চা, একটাও নাই। কোনো শব্দও শুনি নাই, শুধু একটা বিস্ফোরণের শব্দ। ভাবছিলাম আমিও বোধহয় আগুনে পুড়ে মরে যাবো। আল্লাহ কিভাবে আমাকে বাঁচাইছে জানিনা। মাত্র পাঁচ হাত দূরে প্লেনটা আমার উপর দিয়ে গেছিল। এটা প্রশিক্ষণ বিমান! এমন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কেন উড়ছিল?”

এই ঘটনার সময় এক মা স্কুলে এসেছিলেন সন্তানের ভালো ফলাফলের কারণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। তিনি বললেন, “আমি স্কুলের পাশে রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঠিক আমার পেছনেই বিমানটা পড়েছে। আমার বাচ্চা কাছে ছিল, আল্লাহর রহমতে ও ভালো আছে।”

একজন অভিভাবক জানালেন, “আমার পাশে একটা মেয়ে ছিল শারমিন। ওর দাদু ওকে খুঁজছিল। মেয়েটা মাইলস্টোন স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে। আমরা তখন হাসপাতালের সামনে ছিলাম। দু’আড়াই ঘণ্টা আগে ইউনাইটেড হসপিটালে চারজনকে নিয়ে যাওয়া হয়, যার মধ্যে তিনজন ছিল শিক্ষার্থী এবং একজন অভিভাবক। পথে একটি শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করে, বাকি তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

অন্যদিকে, ঘটনার পর থেকে ইউনাইটেড হসপিটালে ১৫৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল, যাদের ঢাকা মেডিকেল, বার্ন ইউনিট ও অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৩ জন রোগী, যাদের কারও কারও দগ্ধের মাত্রা উল্লেখযোগ্য না হলেও, অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, প্যানিক অ্যাটাকের শিকার। বার্ন ইউনিটের সীমাবদ্ধতার কারণে গুরুতর দগ্ধদের অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, “মৃত্যুর নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে উদ্ধারকাজের সময় ও আহতদের স্বজনদের আর্তনাদ থেকেই অনুমান করা যায়, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ। যাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল, তারা অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন।”

ঘটনার ভয়াবহতা আর হৃদয়ভাঙা অভিজ্ঞতায় কাঁপছে পুরো এলাকা। এক অভিভাবক বলেন, “আমার চোখের সামনে বাচ্চাগুলা পুড়ে গেল ভাই। এত নিষ্পাপ প্রাণ! স্কুলে ছুটি হইছিল, হয়তো কিছু বাচ্চা গার্ডিয়ানদের জন্য অপেক্ষা করছিল, আর কিছু দোলনায় খেলছিল। মুহূর্তেই আগুনে শেষ সব। এই আগুনটা কেমন আগুন, আমি বুঝাতে পারবো না।”

একের পর এক স্বজনহারার কান্না, নিখোঁজদের খোঁজে ছুটোছুটি, আর ভস্মীভূত স্কুল প্রাঙ্গণে পড়ে থাকা জুতা, ব্যাগ আর পোড়া খেলার সামগ্রী সব মিলিয়ে রাজধানীর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।

Jahan

×