
ইসলামে শহীদ বা শাহাদাতের মর্যাদা অত্যন্ত সম্মানজনক। অনেকেই মনে করেন, কেবলমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তিরাই শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভাষ্যমতে, শহীদের পরিধি শুধুমাত্র রণাঙ্গনে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কষ্টদায়ক অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেও একজন মুমিন ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা পেতে পারেন।
বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তার পিতা জাবের (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার অসুস্থ সাহাবিকে দেখতে গিয়ে নারীদের বলতে শুনলেন, “আমরা ভেবেছিলাম তুমি শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করবে।” তখন নবীজি (সা.) বললেন,“আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণকারী নারীও শহীদ।”
(সুনানে আবু দাউদ: হাদিস ৩১১১)
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, এমন অনেক মৃত্যু রয়েছে যা বাইরের দৃষ্টিতে দুঃখজনক মনে হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে তা সম্মানজনক শাহাদাতের মর্যাদা রাখে। বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডে যারা নিহত হন, তাদের ব্যাপারে আমরা অনেক সময় শুধুই করুণা প্রকাশ করি, কিন্তু জানি না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার—শহীদের মর্যাদা।
কেন এই মর্যাদা?
বিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেন, এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে যন্ত্রণার মাত্রা, ধৈর্য, হঠাৎ বিপদের মুখোমুখি হওয়া এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ধরে রাখার যে আত্মিক গুণ রয়েছে, সেটিই তাদেরকে শাহাদাতের স্তরে উন্নীত করে দেয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক প্রকার রহমত।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে প্রয়োগ
বর্তমানে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময় বড় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কখনও কারখানায়, কখনও বাসায় বা স্কুলে দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। অনেকেই এসব মৃত্যু নিয়ে কেবল দুঃখ প্রকাশ করলেও হাদিসের আলোকে এদের কেউ কেউ আল্লাহর কাছে শহীদের মর্যাদা পেয়ে যেতে পারেন। তবে শহীদের মর্যাদা পাওয়ার জন্য ঈমানের শর্ত পূরণ অবশ্যই অপরিহার্য।
মৃত্যুকে দুঃখজনক পরিণতি হিসেবে দেখলেও, নবীজির (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী, মানুষের কষ্টদায়ক ও বিপদজনক মৃত্যাকেও আমরা মর্যাদার চোখে দেখতে পারি। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করার পাশাপাশি, আমরা যেন আল্লাহর কাছে তাকওয়া এবং ঈমানের সঙ্গে জীবন শেষ করার তাওফিক চাই। কারণ, শহীদের মর্যাদা লাভের আসল চাবিকাঠি হলো সচ্চরিত্র, ইখলাস ও ঈমান।
আফরোজা