ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

মাদারগঞ্জ হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা: টেকনিশিয়ান চিকিৎসক, শিয়াল রুগীর বিছানায়

মোহাম্মদ শাহিন, সংবাদদাতা, মাদারগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৭ জুলাই ২০২৫

মাদারগঞ্জ হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা: টেকনিশিয়ান চিকিৎসক, শিয়াল রুগীর বিছানায়

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় খুড়িয়ে চলছে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিকে কাগজে-কলমে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেবা নেই ৫০ শয্যার। সেবা নিতে এসে হতে হয় বিড়ম্বনার শিকার। জনবল ও চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার ৩ লাখ মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারগঞ্জে ১০০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে রোগীদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাপত্র লিখছেন ইসিজি টেকনিশিয়ান। অন্যদিকে নর-ভর বিছানায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে রুগী আর নতুন বিছানায় ঘুমাচ্ছে শিয়াল! 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  গত ২০২৩ সালের ১১ মার্চ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু জনবল বৃদ্ধি না করায় শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি সেবা কার্যক্রম। তাই আগের মতো পুরোনো ভবনেই ৫০ শয্যার বিপরীতেই চলছে রোগী ভর্তি ও পরিচর্যা। আরও জানা গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও পাঁচজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে চারজন মেডিকেল অফিসারই প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন কারণে ছুটিতে ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংযুক্ত রয়েছেন। তাই বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে সেবা দিচ্ছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। ৩১ নার্সের বিপরীতে ২৭ জন কর্মরত রয়েছেন, যা সন্তোষজনক হলেও তিনজন ওয়ার্ডবয়ের জায়গায় নেই একজনও। ১০০ শয্যা তো দূরে থাক, আগের ৫০ শয্যার অনুযায়ী যতজন চিকিৎসক থাকার কথা, তাও নেই। এর ফলে সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে আরও দেখা যায়, পুরোনো তিনতলা ভবনের নিচতলায় বহির্বিভাগে রোগী ও তাদের স্বজনরা টিকিট কেটে সেবা নিতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় কর্মরত চিকিৎসকদের সেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হয় এবং রোগীরাও সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। 

বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগিদের স্বজনরা  বলেন, ‘ডাক্তার ওষুধ লিখে দেন, কিন্তু হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ দেয় না। সকল ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়। শুধু ঔষধ না এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়।

নাম প্রাকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, এই হাসপাতালে আউটডোরে প্রতিদিন ৩ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেয়। তাদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে ইসিজি টেস্ট দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, হাসপাতাল গেটের পাশে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দায়িত্বে থাকা লোকজন ইসিজি রুম তালাবদ্ধ করে রাখে। এ অবস্থায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালের ১০০ টাকার ইসিজি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে ৪০০ টাকায় করতে বাধ্য হয়। 

হাসপাতালটির আউটডোরে ১০৪ নাম্বার কক্ষে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র লিখতে দেখা যায় ইসিজি টেকনিশিয়ান মাহমুদুর রহমানকে। এসময় তার পরিচায় জানতে চাইলে তিনি তার নাম বললেও পূর্ণ পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন,পদবি প্রকাশ করতে তার অথরিটির নিষেধ আছে। চিকিৎসকসহ অন্যান্য সংকট ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

খোজ নিয়ে আরও জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলা ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির প্রধান ভরসা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।


জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মাহমুদুর রহমান ইসিজি টেকনিশিয়ান পদে যোগ দিলেও তার ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফেকাল্টি (ডিএমএফ) কোর্স করা আছে। সেই হিসাবে তিনি আউটডোরে রোগী দেখতে পারেন। ইসিজি রুম তালাবদ্ধ থাকার বিষয়ে তিনি জানান, দিনে ১-২ জনকে ইসিজি টেস্ট দেওয়া হয়, তারা বাইরে থেকেই ইসিজি করে নেয়।

জামালপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন জানিয়ে বলেন, ইসিজি টেকনিশিয়ান নিজের কাজের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করতে পারে; কিন্তু তার নির্ধারিত কাজ বাদ দিয়ে আরেকটা কাজ করতে পারবে না। বিষয়টি তারা দেখছেন।

Jahan

×