
ছবিঃ সংগৃহীত
নড়াইল শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভওয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে একটি জলাবদ্ধতা সমস্যায় জর্জরিত। বছরের প্রায় সাত মাস মাঠে স্থায়ী পানি জমে থাকে, যা সামান্য বৃষ্টি হলেই হয়ে ওঠে একটি মিনি দিঘি। শিক্ষার্থীরা বছরের সাত মাস স্কুলে গিয়ে জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই জলাবদ্ধতা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও রীতিমতো দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভওয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবন রয়েছে। উত্তর ভবনে রয়েছে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ক্লাস, শিক্ষক মিলনায়তন ও অফিস কক্ষ। অপরদিকে দক্ষিণ ভবনে চলছে শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান। এই দুই ভবনের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার, আর মাঝে রয়েছে সেই জলমগ্ন মাঠ। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেই মাঠটি পরিণত হয় জলাধারে। দুই ভবনের বারান্দা পর্যন্ত উঠে আসে পানি, ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে।
তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী দৃষ্টি বিশ্বাস বলেন, “বৃষ্টির পর কয়েকদিন ধরে স্কুল যাই না। মাঠে পানি থাকায় অন্যদিক দিয়ে ঘুরে যেতে হয়, যা কষ্টকর।” পঞ্চম শ্রেণির উমামা নাজ হৃদিতা, মালিহা তাবাচ্ছুম ও তানহা জারিন জানান, “জুতা ও ড্রেস ভিজে যায়, অনেক সময় ড্রেনে পড়ে যাই। টিফিনের সময় মাঠে খেলাধুলা করা যায় না।”
এই সমস্যার কারণে একই শ্রেণির দুটি শাখাকে একত্রে নিতে হয় একটি ভবনে, যা পাঠদান কার্যক্রমকে করে তোলে অব্যবস্থাপনার শিকার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বলেন, “১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই এই সমস্যা চলছে। শহরের কুরিগ্রাম এলাকার বিস্তৃত বৃষ্টির পানি এই মাঠ দিয়ে নামায় এখানে পানি জমা হয়।” তিনি আরও জানান, “বিগত মেয়রকে অবগত করেছিলাম, এমনকি বর্তমানে জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
জানা গেছে, চার বছর আগে মাঠের পাশ দিয়ে একটি এক ফুট প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণ করা হলেও তা বর্জ্যে ভর্তি থাকে অধিকাংশ সময়। পূর্ববর্তী মেয়র বড় ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির জমি ছাড়তে অস্বীকৃতি সেই উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক গোলক চন্দ্র বিশ্বাস, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, মোঃ শাকিল ও রওশন আরা বলেন, “আমরা ছোট থেকে দেখে আসছি, এই মাঠে শহরের পানি এসে জমা হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো মাঠ ডুবে যায়।” পানি জমে থাকায় সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ, স্কুল মাঠে ময়লা পানি এসে পড়ে, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক জানান, “আমরা ঠিকমতো বসতেও পারি না। শিক্ষকেরাও দক্ষিণ ভবনে যেতে পারেন না। ফলে চারশ’র বেশি শিক্ষার্থীকে একটি ভবনে ক্লাস নিতে হয়।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান সরেজমিন এসেছিলেন এবং স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।”
তবে নড়াইল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, “নতুন ড্রেন নির্মাণের কোনো তহবিল নেই। তবে সেভেন টাউন প্রকল্পে ফ্রান্সের অর্থায়নে নড়াইল পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আশা করছি ২০২৬ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।”
ইমরান