
ছবি: জনকণ্ঠ
টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনী জেলার পাঁচটি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অধিকাংশ গ্রামে পানি নেমে গেছে, তবে কিছু কিছু এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তাদের বাড়িঘরের মালামাল ভিজে কাদায় নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে কাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, নষ্ট জিনিসপত্র পরিষ্কার করে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে তারা।
বন্যায় পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ৩ শত কিলোমিটার সড়কে এবং ১২৬টি গ্রামীণ সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৯০ কোটি টাকা।
এদিকে বিভিন্ন বিভাগ তাদের রাস্তাঘাট, কালভার্ট, বাঁধের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু করেছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন, সরকার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১২২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল দিয়ে প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করা হবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেনাবাহিনী দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
এরপর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন টেকসই বাঁধ নির্মাণে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জুসহ বিভিন্ন সংগঠন সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
তাদের অভিযোগ, ১৯৯০ সালের পর থেকে বাঁধ সংস্কারের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজের মান ছিল নিম্নমানের। এতে প্রতি বছর জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। তাই এই প্রকল্পটি যেন স্থায়ী ও টেকসইভাবে নির্মিত হয়, সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনী দিয়ে কাজ করানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন জানিয়েছেন, ফুলগাজী, পরশুরামসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন মেরামতের কাজ জরুরি ভিত্তিতে শুরু হয়েছে। তিনি জানান, গত ৮ জুলাই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি স্থানে ভাঙন হয়, যার ফলে ফেনীর ৬টি উপজেলায় প্লাবিত হয় ১৩৭টি গ্রাম।
মুহুরী নদীর বাঁধ যেন ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, ৯০ সাল থেকে মুহুরী নদীর বাঁধ যেন সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বাঁধ মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ এলেও হয় দায়সারা কাজ ফলে সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারী হয়।
১৯৯৩ সালে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে ভারত থেকে নেমে আসা পানি ধারণের জন্য নদীর উজানে জলাধার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর দুই পাড়ে ৫০ মিটারের অধিক সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাঁধ শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বরাদ্দ হয় প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বশরীরে পরশুরাম গিয়ে কাজের উদ্বোধন করেন।
তবে নদীর দুই পাড়ের জমির মালিকরা স্থানীয় নেতাদের দিয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদবির করে জলাধার সম্প্রসারণ অংশটি প্রকল্প থেকে বাতিল করিয়ে নেন। চলতে থাকে রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের তদবির, দায়সারা বাঁধ নির্মাণ যার মাশুল ৩০-৩৫ বছর ধরে দিচ্ছে পাঁচ উপজেলার লাখো মানুষ। বসতবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুরের মাছ হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক অনুসন্ধান করে সময়োপযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে মানুষের সহায়-সম্পদ রক্ষা করা হোক এবং প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হোক।
শহীদ