ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

জাবির ভয়াল ১৫ জুলাই: ছাত্রলীগের হামলার এক বছরেও মেলেনি বিচার

ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি, জাবি

প্রকাশিত: ২১:২৯, ১৪ জুলাই ২০২৫

জাবির ভয়াল ১৫ জুলাই: ছাত্রলীগের হামলার এক বছরেও মেলেনি বিচার

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের চাপিয়ে দেয়া অন্যায্য কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাই মাসের শুরু থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী এই ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতে প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৫ জুলাই বিকেলে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।

তবে শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে হঠাৎ করেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেদিন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা দুই দফায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের উপর বর্বরোচিত সশস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হয়নি বিচার। হামলাকারীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। তাঁরা দ্রুত বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, ১৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন এই হামলার নেতৃত্ব দেন। এতে গুরুতর আহত হন আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুর রশীদ জিতু, মাহফুজ ইসলাম মেঘ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, তৌহিদ সিয়াম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন এবং প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি মোসাদ্দেকুর রহমানসহ অন্তত ৫০ জন।

সেদিন সন্ধ্যায় আহত হয়েছিলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, “১৫ জুলাইয়ের মিছিলে ছাত্রলীগের সদস্যরা আচমকা আমাদের ওপর বটতলায় হামলা চালায়। কাপুরুষোচিত সেই হামলায় আমি নিজেও আক্রান্ত হই। মেয়েদের লক্ষ্য করে প্রথম দফার আঘাত আসে। আমরা যারা পাশে ছিলাম, মেয়েদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাও মার খাই। পিঠে ও কোমরেও তীব্র ব্যথা পেয়েছিলাম। সেদিনের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।”

সেদিন রাত ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর চূড়ান্ত হামলা চালায়। পেট্রোল বোমা ও ইট নিক্ষেপ করা হয়। হামলার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এবং হামলাকারীদের সুযোগ করে দেয়।

সেদিন ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিকদের মধ্যে আহত হন বাংলা ট্রিবিউনের এস এম তাওহীদ, সময়ের আলোর মুশফিকুর রিজওয়ান এবং ডেইলি স্টারের সাকিব আহমেদ। পুলিশি গুলিতে আহত হন বণিক বার্তার মেহেদী মামুন, দৈনিক বাংলার সার্জিল, জনকণ্ঠের ওয়াজহাতুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ টুডের জোবায়ের আহমেদ।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৫ জুলাইকে ‘কালরাত্রি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। এই রাতের স্মরণে কর্মসূচি হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জমায়েত, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, স্মৃতিচারণ এবং মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “জুলাইয়ের হামলার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করছি, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।”

মিমিয়া

×