ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

গ্রাম বাংলার ‘চিঠি’ আজ শুধু স্মৃতির বাক্সে

আব্দুন নুর আজাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ০১:০৯, ১১ জুলাই ২০২৫

গ্রাম বাংলার ‘চিঠি’ আজ শুধু স্মৃতির বাক্সে

এক সময় ছিল, ঠাকুরগাঁও সদরের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর প্রতিটি পাড়ায় থাকতো একজন করে অধীর অপেক্ষায় থাকা মানুষ। তার অপেক্ষার প্রহর গুনা হতো কেবল একটা চিঠির জন্য। হয়তো শহর থাকা ছেলের লেখা, হয়তো প্রবাসী ভাইয়ের, কিংবা স্রেফ ভালোবাসার কারও হাতে লেখা একটা চিঠি। সেই অপেক্ষার আবেগ, সেই খামভরা হাতের লেখা এখন শুধু স্মৃতির বাক্সে ধুলোমলিন হয়ে পড়ে আছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা, রহিমানপুর কিংবা চিলারং গ্রামের বাসিন্দারা আজও স্মৃতিচারণ করেন—কীভাবে সকালবেলা পোস্টম্যানের বাইসাইকেলের ঘণ্টা শুনলেই বাড়ির দরজা খুলে রাখতেন তারা। কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চিঠি বিলি করা মানুষটি যেন তখন ছিল একজন শুভদূতের মতো।

রহিমানপুরের ৭০ বছরের আফাজ উদ্দিন বলেন, “আমার মেয়ে বিয়ের পরে বগুড়ায় গেছিল। তখন প্রতি শুক্রবার চিঠি আসতো। সেই চিঠি পড়তে পড়তে কান্না করতাম, আবার হাসতামও।”

বর্তমানে সদর উপজেলার সব ইউনিয়নেই মোবাইল টাওয়ার আছে। ইন্টারনেটের ছোঁয়ায় এখন ছেলেমেয়েরা হোয়াটসঅ্যাপে ভিও করে, ইমোজি দেয়, ভয়েস নোট পাঠায়। কিন্তু সেই কাগজের গন্ধ, হাতে লেখা বানান ভুলের সরলতা আর খামে ঠোঁট ছোঁয়ানো ভালোবাসা—এসব কিছুই এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

পোস্ট অফিসের সামনে এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ টাকা তোলেনা, চিঠি নিতে আসেনা। সদর উপজেলার পুরাতন ঠাকুরগাঁও ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার জানালেন—
“আগে দিনে ৩-৪০০টা চিঠি বিলি করতাম। এখন মাসে ১০-১২ টার বেশি আসে না, তাও সরকারি অফিসে। মানুষ আর হাতে লেখা কিছু রাখে না।”

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল সংলগ্ন এক পুরনো বইয়ের দোকানে দেখা গেল একজন বয়স্ক ভদ্রলোক একটা পুরনো চিঠি খুঁজে বের করে জোড় করে রাখছেন। জানতে চাইলে বললেন, “এটা আমার স্ত্রীর লেখা প্রথম চিঠি। আজ সে নেই, কিন্তু এই চিঠিটা এখনো আমার বুকের ভেতর। ফোনে কথার ঝাঁঝ আছে, কিন্তু চিঠিতে ছিল মায়া।”

আজকের ঠাকুরগাঁও সদরে চিঠি লিখে কেউ প্রেম করে না, চিঠি দিয়ে কেউ খবর পাঠায় না। কিন্তু যারা একবার হাতে লেখা সেই মায়াভরা পাতাগুলো পেয়েছে, তারা জানে ডিজিটাল যুগে সম্পর্ক দ্রুত হয়, তবে গভীরতা হারায়। আর সেই পুরনো চিঠিগুলো শুধু কাগজ নয়, ছিল সময়ের সাক্ষ্য, ভালোবাসার দলিল।

রাজু

আরো পড়ুন  

×