ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, ১০ রুটের লঞ্চ চলাচল আজও বন্ধ

ভোলায় ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে ধানের বীজতলার ক্ষতি, ভেসে গেছে বহু পুকুরের

কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

হাসিব রহমান, ভোলা

প্রকাশিত: ১৭:২২, ১০ জুলাই ২০২৫

ভোলায় ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে ধানের বীজতলার ক্ষতি, ভেসে গেছে বহু পুকুরের

ছবি: সংগৃহীত

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা ৭ দিন ধরে দ্বীপজেলা ভোলায় বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা। অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের বীজতলার। ভেসে গেছে বহু পুকুরের মাছ। এতে কয়েক কোট টাকার ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত থাকায় গেলো এক সপ্তাহ ভোলায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ভোলা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, গত এক সপ্তাহে ৩৯৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত ৯১.৩ বৃষ্টি রের্কড করা হয়।

এদিকে অতিবৃষ্টি কারণে ভোলা শহরের বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার ৭ উপজেলায় রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অতিবৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরার ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। মনপুরার ঈশ্বরগঞ্জ দাসেরহাট উত্তর সাকুচিয়া ও রহমানপুর এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে। সেখানকার মানুষের মৎস্য ঘের, গবাদি পশু, আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, সদর উপজেলার কাচিয়া মাঝের চর প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার আমনের ক্ষেত ডুবে গেছে। কৃষকরা ক্ষেতে চাষ দিয়েও পানির জন্য বীজ লাগাতে পারছে না।

মদনপুরের টবগী এলাকার নাসিরউদ্দিন শিকদার জানান, টানা বৃষ্টির কারণে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। গোয়ালঘর থেকে গরু-ছাগল, খোপ (মুরগির খাঁচা) থেকে মুরগি বের করতে পারছেন না। ক্ষেত ডুবে থাকার কারণে ঘাস কেটেও আনতে পারছেন না। ইউনিয়নের চরপদ্মার সফিক মাঝি বলেন, সব মিলিয়ে জীবন থমকে আছে। বৃষ্টিতে নড়তে পারছেন না।  

ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরকালি গ্রামের মো. মহসিন, রাজাপুর ইউনিয়নের রুহুল আমিন মিজি জানান, তাদের আমনের বীজতলা ডুবে গেছে। বৃষ্টির জন্য ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না। কলাতলীর মোসলেহউদ্দিন মাঝি বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ক্ষেত ডুবে আছে। কাজকর্ম নেই, ধারদেনা করে দিন চালাতে হচ্ছে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ির উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, গত ৭ দিনের টানা বৃষ্টিতে ৫ থেকে ৬ শত হেক্টর জমির আমনের বীজতলা ও ৭০০ হেক্টর জমির শাকসবজির আংশিক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি কমে গেলে পুরো ক্ষতির চিত্র জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, ভোলা জেলা টানা বৃষ্টিতে ২৫০ হেক্টর ঘের ও ৪০০ হেক্টর পুকুর-দিঘি প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে অন্তত ১১ কোট কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে অবকাঠামগত ক্ষতি আড়াই কোটি ও মাছ ভেসে গেছে সাড়ে ৮ কোটি টাকার মতো।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সাগর উত্তাল হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার (১অ জুলাই) সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা রয়েছে। এত করে আজসহ টানা ৭ দিন ধরে ভোলা জেলার ইলিশ থেকে লক্ষ্মীপুর, মনপুরা-ঢাকা, হাতিয়া-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ১০টি নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। তবে ভোলা-ইলিশা রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

রাকিব

×