
রাম্বুটানের বাণিজ্যিক চাষে ভালুকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। লিচুর মতোই স্বাদে ভরপুর এই রাম্বুটান ফল। ওষুধি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি ফল রামবুটানের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। লিচুর মতো স্বাদের রামবুটান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে জনপ্রিয় ফল।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া এলাকার গোয়ারী গ্রামে বছর পাঁচেক আগে ব্যবসা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি ৬ একর জমি লিজ নিয়ে ফলের বাগান করে গ্রামের মাটিতে বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন চাচা-ভাতিজা শেখ মামুন ও আশরাফ উদ্দিন শুভ মানের ওই দুই ব্যাক্তি। থাইল্যান্ড থেকে ৪০০ রামবুটান গাছের চারা আমদানি করে ২০২০ সালে বাগান করেন তারা। বর্তমানে ২১২টি গাছ বেঁচে আছে, যেগুলোতে ২০২৩ সালে প্রথম–ফল আসতে শুরু করে। এ বছরই হয়ে গেল বাম্পার ফলন।
এই রাম্বুটান ফলটি দেখতে ডিম্বাকৃতি, খোসা নরম কাঁটাযুক্ত পাকা ফল উজ্জ্বল লাল, কমলা বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। পুরু খোসা ভেতরে সাদা শ্বাস। যা খেতে ও দেখতে লিচুর মতোই। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্ট ফলের রং সবুজ থাকে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে এ ফল চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি এ ফল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
ফলটি দেখতে অনেকটা ভেরেন্ডা ফলের মতো। ভেরেন্ডা ফল গ্রামে গঞ্জে প্রচুর ফলে। গাঢ় সবুজ রঙের ভেরেন্ডা বীজের বহিরা-বরণে থাকে নরম কাঁটা আর সবুজ খোসাযুক্ত এই ভেরেন্ডা বীজের সাথে রাম্বুটানের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এ ফলটি পাকলে সবুজাভ হলদে রঙ ধারণ করে। প্রজাতি ভেদে হালকা লাল, বাদামী এমনকি কালচে রঙের রাম্বুটানও দেখা যায়। ফলের খোসায় নরম কাঁটার মতো লোম/চুল থাকায় আমাদের দেশে অনেকে একে ‘দাঁড়িওয়ালা লিচু’ ডাকে।
জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে রাম্বুটানের আদি নিবাস। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মালেও বাংলাদেশে আগে পাওয়া যেত না। বাংলাদেশে এখন কেউ কেউ রাম্বুটানের গাছ লাগাচ্ছেন। বেশ চড়াদামে মাঝে মাঝে ঢাকার বড় বড় বাজারে বা মার্কেটে রাম্বুটান পাওয়া যায়। তবে এখানকার সুপার মার্কেটেও এটা কম দামে পাওয়া যায় না।
রাম্বুটান চাষি শেখ মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ২১২টি রাম্বুটান গাছে ফল ধরেছে। রাম্বুটান বাগানে ২০২৩ সালে প্রথম ফল আসতে শুরু করে। ২০২৪ সালেও কিছু ফল আসে। তবে সেগুলো আমরা রাখিনি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে ফলন বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে এ বছর সব গাছভর্তি ফল এসেছে। প্রতিটি গাছে ৮০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত ফল ধরেছে। প্রতি কেজি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশ সমূহ যেখানে সারা বছরই গরম থাকে সেই সব দেশে রাম্বুটান ভালো–ফলে । বাংলাদেশের আবহাওয়া রাম্বুটান চাষের উপযোগী। কেউ কেউ চাষ শুরু করেছেন। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সার্বিক পরিবেশ রাম্বুটান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশে রাম্বুটান চাষ করা হলে লিচুর সাথে বাড়তি লিচুর কাজিন খেতে পারবে বাংলাদেশের মানুষেরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এই ফলের নাম শুনেছি। এর আগে ছবিও দেখেছি এখন বাস্তবে দেখলাম। কিন্তু এর স্বাদ নিতে পারিনি। বাংলাদেশের মাটিতে এর চাষ আরও হোক, এই কামনা করি আমি।
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, খেতে খারাপ নয়। আমাদের দেশে চাষ করলে আরো কম দামে খেতে পাবে সাধারণ মানুষ। ১৯৭৮ সালে ভাই জাপান থেকে ফেরার পথে এনেছিলাম সেই প্রথম খাওয়া। স্বাদ ভালো তবে লিচুর সাথে তুলনা করলে হবেনা । এরপর প্রবাস জীবনে অনেক খেয়েছি । ভালো হয় চাষ করলে কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা ছাত্রদের কৃষিতে পেয়েছি যারা ভালো করছেন। আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হলে ভালোই হবে ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এ ফল বাজারে আকার ভেদে কেজি প্রতি এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাম্বুটান দেশের মানুষের জন্য নতুন। এ ফল চাষের জ্ঞান সাধারণ কৃষকদের মধ্যে নেই। উচ্চমূল্যের এ ফলটি চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রথম কাজ হচ্ছে এটি মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এটি চাষে যারা আগ্রহী হবেন তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
কৃষি প্রেমীরা বলছেন, সুস্বাদু রাম্বুটান ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
রাজু