ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানের সংকট দেখিয়ে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ৯ জুলাই ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানের সংকট দেখিয়ে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা

চালের অন্যতম উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানেও চালের বাজার অস্থির। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানের উৎপাদন। টানা বৃষ্টিতে চালের উৎপাদনও ব্যহৃত। এছাড়াও, চালের দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে চালকল মালিকদের কারসাজি। অটোরাইস মিলগুলো বিভিন্ন বড় বড় মোকাম থেকে শতশত টন ধান মজুত করছে। এ কারণে বেড়েই চলেছে ধানের দাম। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামে। গরিবের মোটা চালও কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। পাইকারি ও খুচরা দুই বাজারেই হু হু করে বাড়ছে দাম। 

চালের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলছেন, বাজারে চালের সংকট নেই, অথচ দাম বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অবৈধ মজুতাদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চালের পাইকারী ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, ঈদের পর থেকেই বাজারে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালের দাম ছয় থেকে সর্বোচ্চ আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেই দাম এখন পর্যন্ত আর কমেনি। উচ্চমূল্যেই সেই দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল এখন ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে চালের কেজি ছিল ৭৮-৮০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫৮-৬০ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের চাল ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, নিউমার্কেটের মুদি দোকানদার জিয়াউর রহমান বলেন, গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। আর মোটা ও মাঝারি চালের কেজিতে বেড়েছে ছয়আট টাকা। তার দাবি, ভরা মৌসুমে এভাবে চালের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক। এরপরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। মিল মালিকরা পারস্পরিক যোগসাজশে অবৈধ মজুত করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই দোকানি।

চাল ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বাবলু বলেন, অটোরাইস মিল মালিকদের অবৈধ মজুতের কারণে বাজারে ধানের দাম বাড়ছে। ধানের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। এছাড়াও টানা বৃষ্টির কারণে চলের উৎপাদন ব্যহৃত হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে দাবি করেন তিনি। 

দোকানি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিমুল অটোরাইস মিলের মালিক ওমর খৈয়ম শিমুল বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যতগুলো ধান মজুদ রাখার কথা, সে অনুযায়ী ধান রেখেছি। আমাদের এখানে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়েও ধান মজুদ কম আছে। এসব কারসাজির সঙ্গে আমরা জড়িত নই। তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহার পর ধানের দাম বৃদ্ধিসহ রাইস ব্র্যান পাউডারের দাম স্থির না থাকায় চালের দাম বেড়ে গেছে। 

অন্যদিকে, সাধারণ ক্রেতারা জানান, মূলত ঈদুল আজহার পরপরই চালের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম ৬-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তখন থেকেই আর চালের দাম কমেনি ।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার সাধারণ ক্রেতা ওমর ফারুক বলেন, বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। ফলে মোটা চালের ২৫ কেজির বস্তায় আগের থেকে দেড়শ টাকা বাড়তি যোগ করতে হচ্ছে। এখন ধানের ভরা মৌসুম। এ সময়ে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াটা অযৌক্তিক।

ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়ে যাওয়াকে কারসাজি বলছে ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, শুধু চালকল মালিকরা নন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই বাড়ির মধ্যে চাল মজুদ করে রেখেছেন। এসব অবৈধ গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করা হলে স্থানীয় বাজারে চালের দাম কমে আসবে। 

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অ.দা.) ফজলে এলাহীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

রাজু

×