
ছবি: সংগৃহীত
শহীদ আনাসের নামে নামকরণ হওয়া সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জুলাই আন্দোলনের শহীদ আনাসের মা। তিনি বলেন, “আমি দাঁড়াই আছি একজন উপদেষ্টা মহোদয়ের সামনে, যিনি আমার সন্তানের মতোই ছিলেন। যিনি আমার সন্তানের খুব কাছাকাছি ছিলেন মৃত্যুর সময়। আমাদের শুধু একটাই চাওয়া—আমার সন্তানের জীবন যেন বৃথা না যায়। যেন বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।”
তিনি বলেন, “আমরা এই সড়কটির নামকরণ করেছি শুধুমাত্র মানুষের ভালোবাসা পাবার জন্য। মানুষের মনে রাখার জন্য, দোয়ায় রাখার জন্য। আমাদের আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। কারণ আমার সন্তানের বিনিময়ে পৃথিবীর কিছুই আমি চাই না।”
তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আরও বলেন, “যারা দোয়া করেছেন, সময় দিয়েছেন, সড়কটির বাস্তবায়নে কাজ করেছেন—সবাইকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করি।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উপদেষ্টা মহোদয় শহীদদের রক্তের মর্যাদা রক্ষা করবেন।
আনাসের মা বলেন, “আমাদের আনাস এবং জুনায়েদকে যেন সারা বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভুলে না যায়। যেসব শহীদ আজ আহত অবস্থায় বেঁচে আছেন, যারা কষ্টে আছেন, চিকিৎসা করতে পারছেন না—তাদের দিকেও যেন সরকার ও জনগণ দৃষ্টি দেন।”
তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমার কোনো কিছু চাওয়ার নাই। আমার একটা সন্তান ছিল, সে ১০ পারা কোরআনের হাফেজ ছিল। স্কুলে সবসময় প্রথম হতো। এলাকায় মুরুব্বিদের কোরআন শেখাতো। আমি একটা ছেলে হারিয়েছি। আমার আর কিছু বলার মতো শক্তি নেই, বুকটা ফেটে যাচ্ছে।”
তিনি এলাকাবাসীর প্রশংসা করে বলেন, “১৩ নম্বর এলাকার এই স্থানটি এত সুন্দরভাবে সাজানোর কাজ করছেন আপনারা, সবাই বলছে—ভাই, এটা যেন চিরকাল ধরে রাখতে পারি। আমি চাই এটি যেন একটি ছোট গার্ডেন, একটি ফোয়ারা করে মানুষের স্মৃতিতে অম্লান থাকে।”
আনাসের বিদায় মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সেদিন আমার ছেলে বলেছিল, ‘মা, আজ বিজয় হবে। আমি যাচ্ছি।’ ওর ব্যাংকে কোরবানির জন্য জমানো টাকা ছিল। দেখি একদিন টাকা নেই। পরে বলল, ‘মা, আমি টাকাগুলো নিয়ে গেছি, ছাত্র ভাইদের জন্য কেক-বিস্কিট কিনে দিয়েছি, পানি দিয়েছি।’”
শেষে আনাসের মা উপস্থিত মহল্লাবাসী, অতিথি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা বৃষ্টির মধ্যেও আমাদের পাশে ছিলেন। আমার ছেলেকে আপনারা ভালোবাসতেন, আমি জানি। আপনারা শুধু ওর জন্য দোয়া করবেন। আমার একটাই ছেলে ছিল। এখন আমার আর কিছুই নাই।”
আসিফ