ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

বিলুপ্তির মুখে শেরপুরের দেশি ছোট মাছ

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৫ জুলাই ২০২৫

বিলুপ্তির মুখে শেরপুরের দেশি ছোট মাছ

দৈনিক জনকণ্ঠ

শেরপুরে দেশি ছোট মাছ বিলুপ্তির পথে। খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পুঁটি, মলা, টেংরাসহ শতাধিক প্রজাতি।

একসময় শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে নানা ধরনের দেশি ছোট মাছ পাওয়া যেত। এসব মাছ ছিল গ্রামীণ জনপদের মানুষের পুষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু দিন দিন এসব প্রাকৃতিক জলাধার হারিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছের বৈচিত্র্য।

স্থানীয় জেলেরা জানাচ্ছেন, শেরপুরের বেশিরভাগ খাল-বিল বর্তমানে দখল, দূষণ ও পানিশূন্যতার কারণে মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিং, কৈ, মলা, ঢেলা, পুঁটি, টেংরা, পাবদা, চ্যাপিলা, গুলশা, চাঁদা, আইড়, খৈলসা, বাইম, ফলিসহ অসংখ্য ছোট দেশি মাছ এখন আর সাধারণ বাজারে তেমন চোখে পড়ে না।

শ্রীবরদীর বাসিন্দা কাদির মিয়া বলেন, “আগে বর্ষা এলেই বাড়ির আশপাশের পুকুরে বা ধানখেতে পাওয়া যেত এসব মাছ। এখন খুঁজলেও দেখা মেলে না। শহরের বাজারে যা পাওয়া যায়, তাও চড়া দামে এবং অধিকাংশই চাষ করা বিদেশি জাত।”

রানীশিমুল এলাকার বাসিন্দা আবু সাইদ দিনার বলেন, “দেশি মাছ বিলুপ্তির পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে খাল-বিল ভরাট, বিষটোপ ও কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রজনন মৌসুমে অতিমাত্রায় মাছ ধরা এবং রাসায়নিক বর্জ্য ও কীটনাশকের দ্বারা জলদূষণ। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, আগামী প্রজন্ম শুধু বইয়ে এসব মাছের নাম পড়বে বাস্তবে কখনো দেখতে পাবে না।”

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, শেরপুরে এখনো ২০-২৫টি দেশি প্রজাতির মাছ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে সংরক্ষণ প্রকল্প থাকলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা।

দেশি মাছ শুধু খাদ্য নয় এটি আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশের অংশ। শেরপুরের খাল-বিল বাঁচাতে না পারলে বিলুপ্ত হবে দেশি মাছ, হারাবে গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান।

হ্যাপী

×