
১৮ জানুয়ারি ২০২৪। দিনটির যখন সময় শেষ তখনই চলছে ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে প্রশাসন সোর্স দুই মিলে। সকলের চোখ ঘুমে ভারী হলেও তাদের চোখে ঘুম নেই।ফাঁসাতে হবে শত্রুদের। কিন্তু কিভাবে?
চিন্তায় ঘুম আধার ভেদ করে যায় বর্ডারের কোণে। সময় তখন ১১: ১০ মিনিট। মাদক ব্যবসায়ী রায়হান হেরোইন চোরাচালানে ব্যস্ত। অভিযান পরিচালনা করে দিয়ার মানিকচক এলাকায় ঐ বর্ডারের ধারে আসামি রায়হান সহ ১ কেজি ৪ শ গ্রাম মাদক উদ্ধার করে বিজিবি।
শুরু হয় ষড়যন্ত্রের ডালপালার বিস্তার। সোর্স রফিকুল ইসলাম তৎকালীন বিজিবি ল্যান্স নায়ক মওদুদ আহমেদের সঙ্গে হাত মেলায়। এতে যোগ হয় গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মতিন। রায়হানকে আসামি করে প্রথম যে এজাহার দায়ের করা হয় সেটি ছিড়ে ফেলেন ওসি মতিন। যার মামলা নং ৩১। এরপর রফিকুল, বিজিবি সদস্য মওদুদ এবং ওসি মতিন তিনজনে বুদ্ধি আঁটেন। কিছু লোককে এই মামলায় পলাতক দেখাতে পারলেই মিলবে মোটা অঙ্কের টাকা।
আর ভাবনা নয়। এবার টাকা কামাইয়ের পালা। রফিককে বলা হয় কোন নাম এজাহারে দেওয়া যায়? তখনই রফিক সুযোগ কাজে লাগায়। রফিকুলের পূর্ব শত্রুতার জের ছিল আলাতুলি এলাকার সেন্টু মেম্বার, পিয়ারুল ইসলাম, সামাদ এবং রুহুল আমিনের সাথে। এখান থেকেই হয় নতুন এজাহারের উৎপত্তি।
আসামি রায়হানের কাছে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে নাম উল্লেখ করে পলাতক দেওয়া হয় ৫ জনকে। এছাড়াও আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত নামে এজাহারভুক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ এ গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মতিন অবৈধভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এরিয়ার প্রবেশ করে আসামিদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসে। এর ১ মাস পরেই ষড়যন্ত্র করে আসামিদের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ এ রাত আনুমানিক ৩ টার সময় আলাতুলি ইউনিয়ন শান্তিপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৫। অভিযান পরিচালনার সময় রোকশানা নামের এক নারীকে ৫ কেজি ১ শ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাসূত্রে জানা যায় রোকশানার বাড়িতে ১ শ গ্রাম মাদক উদ্ধারের পর বাকি ৫ কেজি মাদক উদ্ধার হয় শরিফুল ইসলামের বাড়ির পেছন থেকে।
র্যাব মাদক উদ্ধারের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে রোকশানাকে আসামি করা হয়। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার মামলা নং -২৫। এরপর মামলার তদন্ত শুরু করেন সদর মডেল থানার এসআই ওবাইদুল হক।তিনিও তদন্ত শেষে রোকশানাকে আসামি করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরবর্তীতে বিস্তর তদন্তের জন্য আদালত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ডিবির এসআই পলাশ চন্দ্র চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়। তিনি কাউকে কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আরও দুইজনকে আসামি করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরা হলেন শরিফুল ইসলাম ও সামাদ।
অভিযোগ আছে, এসআই পলাশ চন্দ্র চৌধুরী সামাদের কাছে খাবিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইল ফোনে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন ( কল রেকর্ড সংরক্ষিত) ।কিন্তু সামাদ নিজে স্বচ্ছ থাকায় তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আসামি করা হয়।
এস পলাশ চন্দ্র বলেন, "আদালতে রোকশানা ১৬৪ ধারায় ২ আসামীর নাম করে জবান বন্দি দিয়েছে।সে কারণেই তাদের না দেওয়া হয়েছে।"
সাক্ষী ও এলাকাবাসীর বরাতে জানা যায়, ২ মামলার ৪ আসামি ঘটনার দিন রাত ১০ টা থেকে একই এলাকার ওবাইদুল,২ জিয়ারুল সহ ৪ আসামি জেলেপাড়া এলাকার তোজাম্মেল হক তজুর দোকানে কেরাম খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। তারা কেরাম খেলা শেষে রাত ১২ টার পরে নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাতে যান।
ঘটনাস্থলে না থেকেও পলাতক আসামি করাই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন প্রশাসন চাইলেই যে কারও নাম এজাহারভুক্ত করছেন।এতে করে সাধারণ জনগণ ফেঁসে যাচ্ছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রশাসন এতটায় বেপরোয়া ছিল যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিরীহ মানুষের কাছেও টাকা নিয়ে গেছে।টাকা না দিলেই মিলেছে মামলা হামলা এমনকি হয়রানি।
সাক্ষীরা আরও বলেন, "সরকার পতনের পর মানুষ আর হয়রানির শিকার হয় না।এখন আর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে না প্রশাসন। এখন আমরা শান্তিতে বসবাস করছি।"
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আশরাফ মল্লিক বলেন, "দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদন দাখিল করা উচিত। আসলে যার কাছে থেকে মাদক উদ্ধার হয় সেই আসামি।সঠিক প্রমাণ ছাড়া আরেকজন আসামি হতে পারে না।"
এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও প্রশাসনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Mily