ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

“আপনেরা কি পারবেন আমার পুতেরে ফিরাইয়া দিতে”- সন্তানহারা এক মায়ের আকুতি

আ: রহিম গাজী, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:০৭, ১৩ জুন ২০২৫

“আপনেরা কি পারবেন আমার পুতেরে ফিরাইয়া দিতে”- সন্তানহারা এক মায়ের আকুতি

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

কত মানুষ দেহি। আমার পুতেরে দেহিনা। পুত তো নাই! আপনেরা কি পারবেন আমার পুতেরে ফিরাইয়া দিতে। নিজের ভাষায় এমনই উক্তি, জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া জামাল ভুঁইয়ার মা মেহের জানের।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে খাসমহল গ্রামের মৃত হারু ভুঁইয়ার ছেলে জামাল ভুঁইয়া। তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ। নারায়ণগঞ্জের ঝালকুড়ি এলাকায় তরকারির দোকান দিত। গত ১৯ জুলাই ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন জামাল।

প্রত্যক্ষদর্শী জামালের ভগ্নীপতি বাবু হাওলাদার জানান, গত প্রায় ১২ বছর ধরে জামাল নারায়ণগঞ্জের ঝালকুড়ি এলাকায় তরকারি ও মুরগীর দোকান করতো। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিল খুব উৎসাহী। শুরু থেকে সে আন্দোলনকারীদের উৎসাহ দিত। গত ১৯ জুলাই বিকালে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। জামাল তখন আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানাতে দোকানের সামনে রাস্তায় নেমে স্ত্রী মানছুরা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকেন। তখন কেউই জানতো না, এই কথাই হবে তাদের শেষ কথা। ঠিক ওই মুহূর্তে পুলিশের গুলি এসে জামালের দুই উরু ভেদ করে বের হয়ে যায়। বাবু হাওলাদার আরও বলেন, কি অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছে তা আমি জানেনা। তবে, গুলি এসে দু উরুর গোস্ত ছিড়ে, বিরাট গর্ত করে, যেভাবে অপর দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে, তাতে মনে হয় বড় ধরনের কোন অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে।  শুরু হয় রক্তক্ষরণ। দিশেহারা হয়ে যাই। কোন উপায় ছিল না। কিছুক্ষণ পর গোলাগুলির শব্দ একটু কমলে জামালকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই শহীদ হন জামাল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জামালের শরীর থেকে সব রক্ত ঝরে গিয়েছিল বলেও জানান বাবু হাওলাদার। জামালের লাশ নিজ বাড়ি মৌডুবীতে এনে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়। 

১০ মাস গত হলেও, সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদ যেন থামছেই না। চোখের পানি শুকায় না মায়ের। কিছু বলতে পারেন না ওই মা। অপর দিকে ১ বছর ৩ মাস বয়সী শিশু পুত্র আবদুল্লাহকে কোলে নিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে জামালের স্ত্রী মানছুরা বেগম বলেন, ১০ মাস আগে আবদুল্লাহর বয়স ছিল ৫ মাস। তখন ওর বাবা শহীদ হন। এখন ওর বয়স ১ বছর ৩ মাস। ওর ভবিষ্যৎ কি, কে নিবে এই শিশুর দায়িত্ব? কিছু বুঝি না। স্বামী হত্যার বিচার চাই।

সরকারি অনুদান পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে মানছুরা বলেন, “হ্যাঁ! ভালই পেয়েছি, কিন্তু স্বামীকেতো পাইনি।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইকবাল হাসান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের শহীদ ঝামাল ভূইঁয়ার বাড়ি আমি গিয়েছে এবং ঈদ উপহার দিয়ে এসেছি এছাড়াও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অনুদান তাদের পরিবারের দেওয়া হয়েছে।” 

তবে সকল অনুদান, আশ্বাস আর সান্ত্বনার পরেও এক পিতৃহীন শিশুর চোখে, আর এক সন্তানের হারানো মায়ের থেকে যায় শুধুই হাহাকার।

মিরাজ খান

×