
শৈশব মানে ছিল নির্ভার সময় স্বপ্ন দেখার, খেলাধুলার, শেখার। কিন্তু মানিকগঞ্জের বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। শহরজুড়ে বাড়ছে শিশুশ্রম। দিনভর কঠোর পরিশ্রমে জড়াচ্ছে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী অসংখ্য শিশু। দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও পরিবারিক অস্থিরতায় তারা শৈশব হারিয়ে জীবিকার যুদ্ধে নামছে।
মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে গ্যারেজ, দোকান, খাবার হোটেল আর চায়ের স্টলে শিশুদের হাড়ভাঙা খাটুনি। টিনের ছাউনি দেয়া একটি গ্যারেজে দেখা গেল ৯ বছরের সোহেলকে। ময়লা প্যান্ট, ছেঁড়া গেঞ্জি আর ঘামে ভেজা শরীরে সে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করছে।
সোহেল জানায়, “সংসারে খরচ অনেক। মা একা সামলাতে পারে না। তাই আমাকেই কাজ করতে হচ্ছে। স্কুল ভালো লাগে না, বই-খাতা কিনবে কে?”
শুধু সোহেল নয়, আরও অনেক শিশুই গ্যারেজে যন্ত্রপাতি মেরামত, হোটেলে থালা ধোয়া কিংবা বাজারে ভারী মাল টানা কাজ করছে। বয়স মাত্র ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। কোনো শিশু এমন পরিশ্রম করার বয়সেই পড়াশোনা ছেড়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছে।
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক জানান, “অনেক সময় দেখা যায় শিশু ভর্তি হলেও টিকতে পারে না। দরিদ্র পরিবারে আয় রোজগারের মানুষ কম থাকায় শিশুরাই সংসারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়।”
জাতীয় শিশুনীতিতে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজ করানো যাবে না। তা সত্ত্বেও বাস্তবচিত্র পুরোপুরি উল্টো। কঠোর পরিশ্রমে এসব শিশুর দেহ-মনের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুশ্রম থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, শিশুশ্রম প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণ এবং জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। না হলে এই শিশুরাই একদিন হয়ে উঠবে বঞ্চনার শিকার একটি প্রজন্ম।
সরকারের নজরদারি ও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হারিয়ে যাবে আরও অনেক শৈশব, আরও অনেক সোহেল।
মিমিয়া