
অনুশীলন মাঠে বাংলাদেশের হেড কোচ ফিল সিমন্স ও স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ (ডানে)
‘পরাজয়ে ডরে না বীর’- ডাবল কোটেশন বাক্য! তবে ফিল সিমন্স ইতিবাচক,‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজ হারটা ছিল কঠিন। কখনও কখনও এসবই দলকে জাগিয়ে তোলে। আশা করি, এটা দলকে চাঙা করে তুলবে। আমাদের মনোবল দুর্দান্ত।’ লাহোরে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। যেখানে ঘুরে ফিরে আসছে আমিরাত প্রসঙ্গ। আইসিসির সহযোগী দেশটির কাছে ২-১এ হারের ধাক্কা লিটন দাসের দল কিভাবে সামলে ওঠে, সেটিই বড় প্রশ্ন।
তবে ধাক্কাটাকেই উজ্জীবিত হওয়ার মন্ত্র করে নিতে চাইছেন কোচ। সদ্য সমাপ্ত পিএসএলে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া সালমান আলি আগাদের মোকাবিলা যে সহজ হবে না, সেটিও স্মরন করিয়ে দিয়েছেন তিনি। মানছেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ দুই পেসারের অভাব বোধ করবে দল। অন্যদিকে টাইগারদের সমীহ করছেন পাকিস্তানের নতুন কোচ মাইক হেসন।
সিমন্স বলেন,‘মনোবল দারুণ, খুব ভালো মানসিকতায় আছে ওরা। আমি মনে করি, এই সিরিজ জয়ের দারুণ সুযোগ আছে। লোকে বলতেই আছে, পাকিস্তান খুব ভালো ফর্মে নেই। তবে ব্যাপারটি হলো নির্দিষ্ট দিনে কী হয়।
আমাদের ভালো সুযোগ আছে সিরিজ জয়ের।’ শারজায় প্রথম টি২০তে ১৯১ রানের পুঁজি নিয়ে ২৭ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ম্যাচে ২০৫ রান করেও আমিরাতের কাছে ২ উইকেটে হারে লিটনের দল। চরম ব্যাটিং ভরাডুবির পর ১৬২ রান করে শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় হারের লজ্জায় ডোবে সফরকারিরা। ডিউ ফ্যাক্টরকে (রাতের বেলা শিশির) ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন লিটন। দুবাই হয়ে লাহোরে যাওয়ার পর সেখানেও সেই ভুত তাড়া করছে তাদের। ফলে ফ্ল্যাট লাইটের আলোয় বালতিতে বল ভিজিয়ে অনুশীলন করছে টিম বাংলাদেশ। অথচ লাহোরের তাপমাত্রা এবং আবহাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
তাসকিন আগে থেকেই নেই, আইপিএলে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছেন মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজের জায়গায় প্রথমবার টি২০তে ডাক পেয়েছেন খালেদ আহমেদ। ‘তার (মুস্তাফিজ) অভাব তো অনুভূত হবেই। সে এখন দলের সিনিয়র সিমার। এছাড়া আইপিএলে যেভাবে বোলিং করেছে, আমরা তাকে অবশ্যই মিস করব। তবে এটা অন্য একজনের জন্য সুযোগ এগিয়ে আসার এবং এই সিরিজে তার জায়গা নেওয়ার।’
বাংলাদেশ কোচ আরও বলেন,‘কাউকে না কাউকে সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। আশা করি, কোনো একজন বোলার এগিয়ে আসবে এবং বলবে যে, আমি এই সিরিজে ফিজের ভূমিকা পালন করব।’ পাকিস্তান এই সিরিজের দলে রাখেনি শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান টি২০ দলে জায়গা হারিয়েছেন আগেই। ‘সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে তরুণরা আছে। সবসময়ই কেউ না কেউ থাকেই, নিজেকে যে মেলে ধরতে চায়। কাউকেই তাই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ওরা না থাকলেও ১১ জনের বিপক্ষেই খেলতে হবে আমাদের। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে আছি।’ পাকিস্তান সর্বশেষ টি২০ সিরিজে খর্বশক্তির নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তা পায়নি।
আগের সিরিজে তারা হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। তবে বাংলাদেশ টি২০তে সর্বশেষ পাকিস্তানকে হারিয়েছে ২০১৬ এশিয়া কাপে। ২০২৩ এশিয়ান গেমসে জিতলেও আদতে সেখানে জাতীয় দল খেলেনি। এবারই পাকিস্তানকে হারানোর সেরা সময় কি না, প্রশ্ন উঠল। বাংলাদেশ কোচ শুনিয়েছেন আশার বাণী,‘পাকিস্তানকে টি২০তে হারানোর সেরা সময় কি না, জানি না। তবে আমাদের সেরাটা খেলার সময় অবশ্যই। সিরিজ জিতলে জিতব। তবে পাকিস্তান সবসময়ই বিপজ্জনক দল। নিশ্চিত ধরে নেওয়ার কিছু নেই।’
২০২৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৯ টি২০তে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়ে ১৬টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। জয় ৩ ম্যাচে। সর্বশেষ জয় ২০১৬ সালে, মিরপুরে। এরপর ৯ ম্যাচে আর কোনো জয় নেই। এবার পাকিস্তান সফরে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে পিএসএল পিছিয়ে যাওয়ায় সিরিজ নেমে আসে তিন ম্যাচে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সামরিক সংঘাতের কারণে এই সিরিজ ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। পিএএসএল খেলতে গিয়ে আতঙ্ক নিয়ে দেশে ফেরা পেসার নাহিদ রানা সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
ফলে নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে পাকিস্তান সরকার। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুরো সিরিজজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। পরের দুই ম্যাচ শুক্র ও রবিবার। সবগুলো ম্যাচই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায়।