
" মজা গুয়োর (সুপারী) স্বাদে মধু -গন্ধে টেকা দায়, পাঁকাগুয়ো ভিজে পঁচে-মজলে পরে দাম যে দ্বিগুণ হয়।" এই কথাটির সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে এখন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায়। সুপারী-নারকেলে সমৃদ্ধ কচুয়ায় চলতি বছর পাঁকা সুপারীর চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে মজা-সুপারী। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এই সুপারীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রচুর সুপারী যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে। দামটাও ভাল।
প্রতিহাটে গড়ে এক কোটি টাকার সুপারী যায় উত্তরবঙ্গে। যা কচূয়া তথা বাগেরহাটের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কচুয়াতে সপ্তাহের দুই দিন হাটবার। এর প্রত্যেক হাটের দিন যে পরিমাণ মজা সুপারি কচুয়া উপজেলা সদর ও বাধাল বাজার হতে উত্তরবঙ্গে যায়, তার বর্তমান পাইকারি বাজারদর কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কখনো পাঁকা, কখনো মজা, কখনো শুকনো-এভাবে প্রায় সারা বছরই কচুয়াতে সুপারি কেনাবেচা চলে। কচুয়ার সুপারি বাগেরহাট জেলা তথা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও উপজেলা সদরে সুপারি কেনাবেচার জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থায়ী সরকারী জায়গা নেই। সুপারির ভর মৌসুম এলে শহীদ মিনার চত্বরসহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে চাটাই বসিয়ে কেনাবেচা চলে। এতে পথচারিসহ হাটে আসা মানুষের জটেপড়ে ভোগান্তি হয়। তাই সরকারীভাবে স্থায়ী সুপারি হাট বা চাতাল করার উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।
কচুয়া সদরের প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো সুপারি আড়তদার নারায়ন চন্দ্র বাওয়ালী বলেন, ''কচুয়ার সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এর উপর অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। সরকারী সহযোগিতা পেলে অনেক উপকার হত।"
বর্ষীয়ান আড়তদার নারায়ন চন্দ্র বাওয়ালীর ছেলে মুকেশ চন্দ্র বাওয়ালী জানান, পাঁকা সুপারির চেয়ে দ্বিগুণ দামে ভেজানো মজা-সুপারি কেনাবেচা হয়। মাঘ হতে জৌষ্ঠ মাস পর্যন্ত মজা-সুপারির মৌসুম। চলতি মৌসুমে প্রতি বস্তা মজা-সুপারি প্রতিকুড়ি সাড়ে ছয়শত থেকে সাতশ' টাকা দরে পাইকারিতে কেনাবেচা হচ্ছে।
তাদের আড়তে মজা-সুপারি ভর্তি সাজানো বস্তাগুলো দেখিয়ে মুকেশ চন্দ্র আরো জানান, প্রতিটি বস্তায় ১০ কুড়ি সুপারি ধরে। প্রতি হাটবার কচুয়া উপজেলা হতে এমনি সাইজের ১৫শ' থেকে দুই হাজার বস্তা মজা-সুপারি ট্রাকে চড়ে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর সহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যায়। দামের হিসাব করে দেখা যায়, কচুয়া হতে প্রতি হাটবার গড়ে এক কোটি টাকার মজা-সুপারি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার হাটের দিন এই সুপারি কেনাবেচা হয়।
বাধাল বাজার এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম খান বলেন, পাকা সুপারি মাসখানেক ভিজিয়ে রাখলে উপরের খোসা পঁচে মজা-সুপারি হয়ে যায়। সেই সুপারির গন্ধ পঁচা, স্বাদ অন্যরকম।
কচুয়া উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীরবরণ পাইক বলেন, কচুয়ার ঐতিহ্যবাহী সুপারিকে প্রশাসনের পক্ষ হতে গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখা হয়। এই সুপারি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, প্রতিহাটে কচুয়া থেকে প্রায় এক কোটি টাকার ভেজানো মজা সুপারি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। এটা দেশের কৃষি-অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। কৃষি অফিসের পক্ষ হতে সুপারি চাষীদের সকল সহায়তা দেয়া হয়। চলতি বছর কচুয়া উপজেলায় এক হাজার ১৫৩ হেক্টর জমিতে আট হাজার ৭১ মেট্রিকটন সুপারি উৎপাদন হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজু