
ছবি: সংগৃহীত
প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে, অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সংঘটিত সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
মঙ্গলবার (৬ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে পুরনো সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করে একটি আধুনিক, সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করবো। সেই ধারাবাহিকতায় ২৫ বার খসড়া সংশোধনের পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।”
নতুন আইনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলোকে স্পষ্টভাবে শাস্তিযোগ্য হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগে যেসব বিতর্কিত ধারা ছিল, সেগুলোর মধ্যে নয়টি ধারাকে বাতিল করা হয়েছে। এসব ধারায় চলমান মামলাগুলো গেজেট প্রকাশের আগের দিন পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।”
মত প্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, “মতামত প্রদান বা কথার কারণে মামলা করার সুযোগ এখন অনেক সীমিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র দুই ধরনের কনটেন্ট অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে— এক. নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নমূলক কনটেন্ট প্রচার বা হুমকি, দুই. ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া। এই ধরনের মামলাগুলো আমলি আদালতে যাবে এবং প্রাথমিক তদন্তে ভিত্তি না থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা খারিজ করা যাবে।”
এছাড়া, এসব মামলাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ শাস্তির মেয়াদ দুই বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য বরং আরও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো এআই ব্যবহার করে সংঘটিত সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু বিষয়ক কনটেন্ট নিয়ে পূর্বে যেসব ধারায় মামলা হতো, সেই ধারাগুলো বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে মানহানিকর মামলার ধারা বাতিল করা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যেসব মামলা বর্তমানে বিচারাধীন, তার ৯৫ শতাংশই বাতিল হয়ে যাবে গেজেট জারির সঙ্গে সঙ্গে।
আসিফ