
খড়খড়িয়া নদীতে স্লুইস গেট নির্মাণে ভাগ্য বদল হতে চলেছে দুই কূলের কয়েক লাখ কৃষকের। এতে সারা বছর চাষাবাদে জমিগুলো তিন ফসলিতে পরিণত হবে। স্বল্প ব্যয়ে বাড়বে উৎপাদন। এতে দুই তীরবর্তী এলাকার কৃষিতে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে।
জানা যায়, খড়খড়িয়া নদীর উজানে পানির উৎস না থাকায় তীরবর্তী এলাকার উভয় দিকের জমিতে সারা বছর চাষাবাদ হতো না। শুকনো মৌসুমে কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থায় অত্যধিক মূল্য ব্যয়ে ইরি-বোরো চাষাবাদ করছে কৃষকরা। এতে চাষাবাদে তেমন লাভ না হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যায়। বিষয়টি অনুধাবন করে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের সহজে সারা বছর সেচ সুবিধা প্রদানে খড়খড়িয়া নদীর ৪০ কিলোমিটার ভাটিতে নির্মাণ করছে সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা কাঠামো। সুন্দরপীর নামক এলাকায় খড়খড়িয়া নদীতে বাঁধ দিয়ে ১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি জলকপাট বিশিষ্ট একটি স্লুইস গেট সমৃদ্ধ সেতু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনসিইএ্যান্ড মাম জেভি-রংপুর গত ২১ মার্চ ২০২৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে এই স্লুইস গেট হস্তান্তরের কথা ছিল। তবে তৎকালীন নানা কারণে নির্মাণ কাজ না হওয়ায় সময় বর্ধিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এভাবে বর্তমানে প্রায় ৬৫ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মহাকর্মযজ্ঞে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজটি সংশ্লিষ্টদের হস্তান্তরের জন্য অবিরাম শ্রম দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, বরাদ্দ সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারিনি। সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। এবার বরাদ্দ সময়ের মধ্যে কাজ হস্তান্তর করতে পারব।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, এই স্লুইস গেটের মাধ্যমে উজানের ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ১০ ফুটের বেশি উচ্চতায় পানি থাকবে। যা সারা বছর সেচে ব্যবহার করতে পারবে। বর্ষায় গেটগুলো উন্মুক্ত থাকবে। শুকনো মৌসুমে পানির যোগান সঠিক রাখতে উজানের ২৮ কিলোমিটারে দাড়োয়ানী নামক স্থানে দিনাজপুর সেচ খালের সংযোগে বিশেষ স্কেফ (নিকাশ কাটানো) দ্বারা সেচ পানি খড়খড়িয়া নদীতে দেওয়া হবে। এতে ওই নদীর ২১ কিলোমিটার শাখা খালেও পানি থাকবে টইটম্বুর। ফলে খড়খড়িয়া নদী ও শাখা খালের সংযোগ সকল নদী এলাকার কৃষকরা সহজে সেচ সুবিধা পাবে। এতে দুই লাখ একর জমি তিন ফসলিতে পরিণত হবে। বাড়বে উৎপাদন।
তমিজ উদ্দিন(৪৬) নামে কৃষক বলেন, এই স্লুইস গেটে সেচ পানির ব্যবস্থাপনায় বদলে যাবে দুই কূলের কৃষি। কৃষকরা পরিকল্পিতভাবে সারা বছর চাষাবাদ করতে পারবে। আবুল খায়ের (৫৯) নামে কৃষক জানান, সাধারণত এ নদী এলাকায় কখনও বন্যা আবারও কখনও খরা। শত প্রতিকূলতার সঙ্গে মোকাবিলা করে চাষাবাদ করতে হয়। তাই অনেকে চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ধীমান ভূষণ জানান, স্লুইস গেটের পানি আবদ্ধ থাকায় লতাপাতাসহ পানির ভেতরে বিভিন্ন প্লাংটন জাতীয় উদ্ভিদ পচে প্রাকৃতিক সারে পরিণত হবে। তাই এই পানি ফসলের জন্য আশীর্বাদ হবে। সর্বোপরি স্বল্প ব্যয়ে চাষাবাদে অধিক ফলন পাওয়া যাবে। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সৈয়দ আমিনুর রশিদ জানান, স্লুইস গেটটি শুধু কৃষিতে নয়, এলাকায় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পানি প্রবাহে ভিন্ন সৌন্দর্য বিমোহিত করবে দর্শনার্থীদের। এতে কৃষিসহ এলাকাবাসীও উপকৃত হবে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, স্লুইস গেটের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। নাম মাত্র ব্যয়ে চাষাবাদে অধিক ফলন পাবে কৃষকরা। এতে খড়খড়িয়া নদী সংলগ্ন কৃষি জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।
প্যানেল