ডিজিটাল ল্যাবের বেশির ভাগ ল্যাপটপ স্থাপনের পর থেকেই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে উপজেলার ১১টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিল। ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনে কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। ডিজিটাল ল্যাবের বেশির ভাগ ল্যাপটপ স্থাপনের পর থেকেই অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এ সকল বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন বিদ্যালয়ে যেসব ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে তা খুবই নিন্ম মানের।
সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদেরকে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে পারর্দশী করার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের ২য় আওতায় সাটুরিয়া উপজেলার ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৭টি ল্যাপটপ, ১টি পিন্টার, ১টি স্ক্যানার, ১টি স্মার্ট এলইডি টেলিভিশন, ওয়েব ক্যামেরা, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি, ইন্সট্রাক্টর টেবিল ১টি, ইন্সট্রাক্টর চেয়ার ১টি, স্টুডেন্টস টেবিল ১৬টি ও স্টুডেন্টস চেয়ার ৩২ টি প্রদান করা হয়। প্রতিটি ল্যাবের রেনোভেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কার্য সম্পাদনের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ আরো ৬৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের পর শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নাম পরিবর্তন করে আইসিটি ডিজিটাল ল্যাব নামে নামকরণ করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ল্যাব পরিচালনার নীতিমালা থেকে জানা যায়, ল্যাভের সর্বচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।সে ক্ষেত্রে প্রতিকর্ম দিবসে ডিজিটার ল্যাবটি আংশিক খোলা রাখতে হবে। যাতে যে কোন সময় ছাত্রছাত্রীরা ল্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। আইসিটি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত না করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজনে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র।বেশিরভাগ ল্যাপটপ নষ্ট থাকায় স্কুলের ডিজিটাল ল্যাবের কক্ষ গুলো রয়েছে বন্ধ অবস্থায়।
উপজেলার বালিয়াটি ঈশর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও ধূল্লা ভূবন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ল্যাব কক্ষ বন্ধ থাকে। এসব ল্যাপটপ স্থাপন করার পর থেকেই, বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে পরে আছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বালিয়াটি ঈশর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মাসুদুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ১২টিই সমস্যায় জর্জরিত। এগুলোর কোনোটিরই ব্যাটারি ব্যাকআপ নেই।বিদ্যুৎ না থাকলে কোনটি আর সচল থাকে না। এ ছাড়াও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য ওয়েব ক্যামেরা চলে না। এতে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বরাদ্দের অভাবে এগুলো সাড়ানো যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
উপজেলার ধূল্লা ভূবন মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, আইসিটির ১৭টি ল্যাপটপ মোটামোটি চালু রয়েছে।তবে চালু হলেও এর আয়ুস্কাল প্রায় শেষের দিকে।ইন্টারনেট বাউজ করতে গেলে অনেক ধীরগতি। অবার অনেক সময় বাউজ করাই যায় না। ওয়াটল ব্যান্ডের ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে। এসব ল্যাপটপ চলে তো চলে না। ল্যাপটপ গুলো নিন্মমানের হওয়ায় কাজ করা যাচ্ছে না।তারপরও শিক্ষার্থীদের এসব ল্যাপটপ দিয়েই ক্লাস করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, এসব ল্যাপটপের ১ বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। এই সময়ের মধ্যে নষ্ট হলে কোম্পানি ঠিক করে দিত। তবে ওয়ারিন্টি শেষ হবার পরে নষ্ট হলে তা স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে নিবে। সরকারিভাবে ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদী নষ্ট হলে তা ঠিক করার কোন বরাদ্ধ না থাকায় ফেলে রেখেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে আইসিটি শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিলে এসব ল্যাপটপ ভালো থাকত। ল্যাবগুলো বন্ধ থাকায় ল্যাপটপের ব্যাটারি চার্জ না করার ফলে এগুলো এখন অচল হয়ে পড়েছে।